■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮ জন। আহতদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
দেশটির হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সুদানের কোরদোফান এলাকায় জাতিসংঘের ভবনে হামলা হয়েছে। এই হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আইএসপিআর জানিয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরতদের ওপর ওই সশস্ত্র হামলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওই শান্তিরক্ষীরা হতাহতের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়েছে, উক্ত এলাকায় পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল রয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলমান রয়েছে।
আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে যথাসময়ে জানানো হবে।
২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ -তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে।
উত্তর ও দক্ষিণ সুদানের মাঝে অবস্থিত ‘আবেই’ একটি সংঘাতপ্রবণ অঞ্চল। উভয় দেশ এ অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে। ফলে এখানে প্রায়ই সংঘাত হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী এখানে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, সুদানে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) মধ্যে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে।
গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ প্রধান উপদেষ্টার
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।’
প্রধান উপদেষ্টা নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।’
সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।’
এ ছাড়া জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় তারেক রহমানের শোক
এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ শোক জানান।
তারেক রহমান বলেন, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বর্বর হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত এবং ৩ জন নারী সেনাসদস্যসহ আরও ৮ জনের আহত হওয়ার খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের পতাকা তলে বিশ্বশান্তি রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গকারী আমাদের বীর সেনাসদস্যরা জাতির গর্ব। তাদের এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি নিহত শান্তিরক্ষীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আহত সেনাসদস্যদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং এই দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
‘একজন সেনা কর্মকর্তার গর্বিত সন্তান হিসেবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসাধারণ পেশাদারিত্ব, সাহস আর আত্মত্যাগ আমাকে সবসময় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। চলমান পরিস্থিতিতে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর ভূমিকা জরুরি বলে আমি মনে করি।’
‘মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বীর সেনাসদস্যদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন।’
