■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
ইরানের মাটিতে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের বড় আকারের আক্রমণে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে হামলায় ৩৪১ জন আহত হয়েছে।
রাজধানী তেহরানেই ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন।
পৃথকভাবে উত্তর-পশ্চিম ইরানের তাবরিজকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছে।
এতে ইরানের সেনাপ্রধান, রেভ্যলুশনারি গার্ডের প্রধানসহ কমপক্ষে ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এছাড়া অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেহরানে একের পর এক হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। তিনি ছিলেন আইআরজিসির সর্বোচ্চ পদে আসীন এবং ইরানের সামরিক কৌশলের অন্যতম রূপকার। তার মৃত্যুতে আইআরজিসি’র নেতৃত্বে এক বড় শূন্যতা তৈরি হলো।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি, যিনি ইরানের পুরো সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। সামরিক নীতি নির্ধারণ ও অপারেশনাল সিদ্ধান্তে তার প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও একজন শীর্ষ সামরিক নেতা গোলাম আলি রাশিদ, যিনি খাতাম-আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার ছিলেন। এই ইউনিটটি ইরানের সামরিক পরিকল্পনা এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির কেন্দ্রে অবস্থান করে। তার মৃত্যু ইরানের স্ট্র্যাটেজিক ইউনিটে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
পারমাণবিক খাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোর একটি হলো, ফেরেইদুন আব্বাসি নিহত হওয়া। তিনি ছিলেন ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান। আন্তর্জাতিক পরমাণু আলোচনায় তার অবস্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি, যিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তারা দুজনই ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও গবেষণা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
তবে শুধু সামরিক ও পারমাণবিক নয়, ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বও এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।
এই হামলায় তেহরানের তাজরিশ এলাকার চামরান হাসপাতালে আহত অন্তত ৫০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনই নারী ও শিশু। বেসামরিক নাগরিকদের এই হতাহত ঘটনা হামলার ভয়াবহতাই তুলে ধরে।
হামলার পর ইসরায়েল জানায়, এই অভিযান চালানো হয়েছে ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে বাধা দিতে। তারা এই হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। ইসরায়েলের দাবি, তাদের লক্ষ্য ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা।
এই ঘটনার পর ইরানে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েলের ইতিহাসে আমরা এক নির্ধারক মুহূর্তে রয়েছি।’
তিনি আরও জানান, অভিযানে নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, পারমাণবিক বোমা তৈরিতে জড়িত বিজ্ঞানী ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান অংশগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ ধরনের অভিযান আরও কয়েক দিন চলতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এদিকে, ইরানের সামরিক মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে।
হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘ইসরায়েল একতরফাভাবে এই হামলা চালিয়েছে। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে, এই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের উচিত হবে না যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কিংবা মার্কিন কর্মীদের ওপর প্রতিশোধ নিতে যাওয়া
ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দুই র্শীষ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
সেনাবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভিকে নতুন সেনাপ্রধান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুরকে আইআরজিসির নতুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার পৃথক ডিক্রিতে এই দুই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে দেশটির দুই র্শীষ বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।
ইরানে হামলার পর অজানা স্থানে চলে গেছেন নেতানিয়াহু
ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অজানা স্থানে, সম্ভবত গ্রিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুক্রবার হিব্রু সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ এ খবর জানিয়েছে।
ভোর থেকে ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানের আশেপাশে এবং অন্যান্য শহরে ধারাবাহিক সামরিক হামলা শুরু করে। এরপর ইরানের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর অজানা স্থানে চলে যাওয়ার খবর এলো।
ইরনার প্রতিবেদন অনুসারে, চ্যানেল ১২ নেতানিয়াহুর বিমানের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যায়, দুটি যুদ্ধবিমান তাকে পাহারা দিয়ে ইসরায়েলি অঞ্চলের বাইরে একটি অজানা স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
পরে আরকে প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বিমানটি গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে অবতরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি এবং ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা হামলায় নিহত হয়েছেন।