অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন কেজরিওয়াল

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ১ জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।  ফলে ভারতের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে তিনি অংশ নিতে পারবেন। ভোটের শেষ দফা পর্যন্ত জেলের বাইরে থাকবেন কেজরিওয়াল।

দিল্লির মদের আবগারি নীতি কেলেঙ্কারিতে ২১ মার্চ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) -এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

২০২৪ সালের সাত দফার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটগ্রহণ করার জন্য তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। ২ জুনের মধ্যেই তাকে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। দিল্লির ৭ লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ ২৫ মে। ১ জুন পাঞ্জাবের ভোট। ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশ। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আম আদমি পার্টিকে ভোটের মুখে নতুনভাবে উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

একই মামলায় গত বছরের অক্টোবরে এএপি নেতা সঞ্জয় সিং গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি ছয় মাস কারাভোগের পর জামিন পান। তাকে শীর্ষ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার সময় যেসব শর্ত দিয়েছিলেন কেজরিওয়ালের জামিনের অন্যান্য শর্তও একই রকম হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

সঞ্জয় সিংকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যার অর্থ তিনি দলের পক্ষে প্রচার করতে পারতেন। আশা করা হচ্ছে কেজরিওয়ালও এখন প্রচার করতে সক্ষম হবেন।

ইডির গ্রেফতারি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া এএপি প্রধানের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ৪ জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, সপ্তম তথা শেষ পর্যায়ের প্রচারণা ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বন্ধ হয়ে যাবে।

কেজরিওয়াল এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়ে মামলা করেছিলেন প্রথমে নিম্ন আদালতে। সেখানে তা খারিজ হওয়ার পর তিনি যান হাইকোর্টে। সেখানেও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন।

ইডি জামিনের বিরোধিতা করে এসেছে সব সময়। এমনকি গত বৃহস্পতিবারেও তারা একটি হলফনামা পেশ করে জামিনের বিরোধিতা করে বলে প্রচারের জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে জামিন মঞ্জুর করা যায় না। আইনের চোখে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। গত পাঁচ বছরে দেশে ১২৩ বার ভোট হয়েছে। প্রচারের জন্য রাজনৈতিক নেতাকে জামিন দেওয়া হলে কোনো রাজনীতিককেই আর জেলে বন্দি রাখা যাবে না। ইডি জানায়, এই যুক্তিতে জামিন দেওয়া হলে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভুল নজির সৃষ্টি করা হবে।

ইডি তার হলফনামায় এ কথাও বলে, ভোটে দাঁড়ানো ও প্রচার রাজনৈতিক নেতাদের পেশার অন্তর্গত। প্রচারের জন্য কেজরিওয়ালের জামিন হলে কোনো কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীও ওই যুক্তিতে জামিন চাইতে পারেন। কারণ, কৃষিকাজ বা ব্যবসা তাঁদের পেশা। তা ছাড়া ভোটে প্রচার করা সাংবিধানিক অধিকার নয়।

সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য ইডির যুক্তি মানতে চাননি। কেজরিওয়াল যে জামিন পেতে পারেন, সেই ইঙ্গিত বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত চলতি সপ্তাহে শুনানি চলাকালীনই দিয়েছিলেন। ইডিকে তাঁরা বলেছিলেন, কেজরিওয়াল নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। জনপ্রতিনিধি। দুই বছর ধরে তদন্ত চালানো হলেও ভোটের ঠিক আগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তা ছাড়া তিনি স্বভাবগত অপরাধী নন। বিচারপতিরা এই প্রশ্নও ইডিকে করেছিলেন, কেন এই তদন্ত এত দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

বিচারপতিরা এর আগে শুনানিতে অবশ্য জানিয়েছিলেন, জামিন মঞ্জুর করা হলেও কেজরিওয়াল সরকারি ফাইলে সই করতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল গ্রেফতার হন। তার রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি সেসময় জানিয়েছিল, গ্রেফতার হলেও কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন।

গ্রেফতারের পর থেকে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বন্দি অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার গ্রেফতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে আম আদমি পার্টি (আপ)।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *