দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গ্রেফতার

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

ভারতের নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নয়াদিল্লির রাজনীতিতে এ ঘটনা ঘটল। আর স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল গ্রেফতার হয়েছেন। ভারতের ইতিহাসে কেজরিওয়ালই প্রথম, যিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন গ্রেফতার হলেন। এর আগে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করে ইডি। তবে গ্রেফতারের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। 

কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি জানিয়েছে, গ্রেফতার হলেও কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন।

সম্প্রতি কেজরিওয়াল অনলাইনে হাজিরা দেওয়ার আর্জি জানালে তাতে রাজি হয়নি ইডি।অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির হন তদন্তকারীরা। শেষ পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল আটক হন। 

দিল্লি হাইকোর্ট আবগারি মামলায় কেজরিওয়ালকে জামিন দিতে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইডির একটি দল পৌঁছে যায় তার বাড়িতে। 

১২ জন ইডি অফিসারের দলটি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ভারতীয় সময় রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করে।

এনডিটিভি বলেছে, ইডি দলে ১২ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের কাছে কেজরিওয়ালের বাসভবনে তল্লাশির হুকুম (সার্চ ওয়ারেন্ট) রয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যে আম আদমি পার্টির প্রধান ও তাঁর পরিবারের মুঠোফোন জব্দ করেছেন। বাসভবনের অভ্যন্তরে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করছেন ইডি কর্মকর্তারা। বাসভবনের বাইরে দিল্লি পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যের পাশাপাশি সিআরপিএফের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়িতে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গেছে এবং কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাতে মনে হচ্ছে, সেখানে বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে।

মদনীতি জালিয়াতি নিয়ে ইডির নয়টি সমন এড়িয়ে গেছেন আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান। গত সোমবার ইডির করা দিল্লি জল বোর্ডে কথিত অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচার মামলার পৃথক আরেকটি সমনেও তিনি হাজির হননি।

মদনীতি মামলায় তেলেঙ্গানার বিআরএস নেতা কবিতাকে গ্রেফতারের এক সপ্তাহের মধ্যে ইডির পক্ষ থেকে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কবিতাকে গ্রেফতারের পর প্রথমবারের মতো এ মামলা কেজরিওয়ালকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নাম যুক্ত করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে ইডি কেজরিওয়ালকে প্রথম সমন জারি করে ২ নভেম্বর হাজির হতে নির্দেশ দেয়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি গ্রেফতার করতে পারে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলায় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে গ্রেফতার করে ইডি। আপের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংকে গত অক্টোবরে হেফাজতে নেওয়া হয়।

কেজরিওয়াল একাধিকবার দাবি করেছেন, দিল্লির মদনীতি নিয়ে কোনো জালিয়াতি হয়নি। তাঁর দাবি, কেন্দ্রে বিজেপির নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ইডি তাঁকে গ্রেফতার করে আপকে দমাতে চায়। আপ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিরোধী দল ইডিকে নিজ স্বার্থে বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি, নেতাদের বিরুদ্ধে এই সংস্থাকে ব্যবহার করছে বিজেপি। আগামী ১০ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন। এর আগেই নেতাদের গ্রেফতারে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।

কেজরিওয়াল কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি তাঁকে গ্রেফতার করবে। আবগারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) দিয়ে বারবার তাঁকে সমন করা হচ্ছে।

গত রোববার ইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আপের প্রধানকে কথিত মদনীতি জালিয়াতির একজন ষড়যন্ত্রকারী বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, ইডির তদন্তে দেখা গেছে কে কবিতার সঙ্গে অন্যদের নিয়ে আপের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মনীশ সিসোদিয়া দিল্লির আবগারি নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সুবিধা পাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। এ সুবিধা পেতে কবিতা আপের নেতাদের ১০০ কোটি রুপি দিয়েছেন।

এদিকে ইডির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো জবরদস্তিমূলক আচরণ ঠেকাতে আগামীকাল শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেজরিওয়ালের দল। আজ বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে সুরক্ষার চেষ্টা চালানো হলেও আদালতে কোনো শুনানি হয়নি।

প্রসঙ্গত, দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে মোট ৯ বার তলব করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। কিন্তু প্রত্যেকবারই ইডির তলব এড়িয়ে গিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *