:: এরশাদ নাবিল খান ::
দুবাইয়ের কথা শুনতে শুনতে আর দুবাইওয়ালা দেখতে দেখতে একদিন সত্যি সত্যি আমারও দুবাই দেখার সুযোগ এসে গেল। সময়টা মঈন-ফখরুদ্দীন আমল। রোষানলে পড়ে কামলা খাটার ভিসা নিয়ে দুবাই যাত্রা। কাতার এয়ারওয়েজের টিকিটে চট্রগ্রাম-ঢাকা হয়ে দোহা। কাতার এয়ারলাইন্সে এটা আমার প্রথম উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা। খাবারদাবার এবং সেবাযত্ন খুব ভালোই লাগল। বিমানে একটা মজার ঘটনাও ঘটল। প্রায় আধা পথ ওড়ার পর ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টদের সুপারভাইজার আমাকে এসে বললেন, Are You alright? If U Need anything, Please go to the kitchen area and ask for.
একটু পর আমি সেখানে গিয়ে এক ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট (অতীব সুন্দরী) কাছে একটা আপেল চেয়েই বুঝতে পারলাম কাতার এয়ারলাইন্স যাত্রীসেবার ব্যাপারে কতখানি যত্নবান এবং দিলদরাজ। তিনি আমাকে বড় বড় দুটো চিকেন স্যান্ডউইচ, একটা আপেল ও একটা কলা দিলেন। তখন মনে পড়ল ক্লাস টেনে থাকতে ভাব সম্প্রসারণ পড়েছিলাম—
যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই,
যাহা পাই তাহা চাই না
খাওয়ার ঘন্টা দেড়েক পরে পৌঁছে গেলাম দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দোহায় প্রায় তিন ঘন্টা লে-অভার। হাঁটাহাঁটি, ঘোরাঘুরি এবং কর্মরত কর্মচারীর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম, তা সংক্ষেপে এ রকম— টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে কাগজ-কলম নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা প্রায় সবাই ফিলিপিনো, দুই-একজন পাকিস্তানি চোখে পড়ল। যারা দোকানদারি করছেন অথবা দোকান-রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন তার একটা বড় অংশ ভাঁড়তীয়! যারা দুই হাতে হুইল চেয়ার ঠেলছেন অথবা ট্রলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিচ্ছেন তারা সবাই শ্রীলংকান। টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে সংখ্যায় যারা সবচেয়ে বেশি তারা বাংলাদেশী তরুণ! দুই-একজনের সাথে কথা বলে জানলাম, শুধু এয়ারপোর্টেই এক হাজার বাংলাদেশী ছেলে কাজ করেন, এবং এরা সবাই ক্লিনিং এর কাজে ব্যস্ত।
আলাপ করে আরও জানলাম, এদেরমধ্যে বিএ-এমএ এমনকি এমবিএ ডিগ্রিধারীও আছেন! বুঝলাম আমরা আমাদের শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়েছি বটে কিন্তু সঠিক লোকটিকে সঠিক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি।
ওখানে বসা অবস্থায় আমার পরিচিত স্বল্প শিক্ষিত প্রতিবেশী গ্রামের একজনের সাথে অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা! চল্লিশোর্ধ লোকটি লিবিয়ায় থাকেন প্রায় বারো বছর ধরে, এলাকার অনেকজনকে লিবিয়ায় নিয়ে গেছেন। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললেন ভাতিজা তুমি অমুকের ছেলে না? আমি বললাম, হ্যাঁ। বললেন কোথায় যাচ্ছো? বললাম দুবাই, উনি বললেন দুবাই যাচ্ছো এমিরেটস কিংবা বাংলাদেশ বিমানে সরাসরি দুবাইতে যাইতে। আমি বললাম মামা তাড়াহুড়া করে কাতার এয়ারলাইন্সের টিকিট-ই কিনেছে। উনি এসেছেন তার ভাগিনাকে তুরস্কের ইস্তান্বুল থেকে নিয়ে, বললেন ভাগিনা এমনই বকলম ঢাকা থেকে ইস্তান্বুল নেমে এয়ারপোর্ট এ ঘুমিয়ে ছিলেন। ভদ্রলোক লিবিয়ায় ভাগিনাকে না পেয়ে ইস্তাম্বুল থেকে ভাগিনাকে নিয়ে ফিরছেন। উনার থেকে লিবিয়া সম্পর্কে অনেককিছু জানলাম তখনও লিবিয়াতে মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতায় দু হাজার সাতের মাঝামাঝির কথা বলছি। যাহোক দোহা থেকে দুবাই পৌঁছালাম স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটায়। আমার জানা ছিলোনা দুবাইতে দুটো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর— দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এবং আল মাখতুম ইন্টারন্যাশনাল। আমি নামলাম দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দিয়ে যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর।
দুবাই এয়ারপোর্টের টার্মিনাল টু পেরিয়ে অপেক্ষমান আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের কয়েকজনের সাথে কোলাকুলি করে তাদের সাথে শারজাহ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দুবাইয়ের স্কাইলাইন এবং রাতের আলো-ঝলমল দেখে মোহিত হয়ে পড়লাম। দুবাইয়ের স্কাইলাইন দেখে অভিভূত না হয়ে পারিনি। কারণ অল্প পরিসরে এত উঁচু উঁচু ইমারত,হংকং ও নিউইয়র্কের পর দুনিয়ার আর কোথাও এত উঁচু বিল্ডিং নেই।
দুবাইয়ের হাইরাইজ বিল্ডিংগুলো রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আসমান ছুঁতে চাচ্ছে, দুবাইয়ের উঁচু উঁচু দালানগুলো দিনের বেলা যেমন তেমন কিন্তু রাতের আঁধারে বর্ণিল আলোয় ঝলমল করে। গুগল ঘাঁটাঘাটি করে যা জানলাম, এসব তাবৎ সম্পত্তির মালিকানা প্রধানত দুবাইয়ের তিনটি কোম্পানির হাতে সীমাবদ্ধ— নাখিল প্রপার্টিজ, এমার প্রপার্টিজ এবং আল মাখতুম গ্রুপ।
ভৌগোলিক ইতিহাস বিষয়ে জানার অতি আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকে, সে হিসেবে ইউএই তথ্য দুবাইয়ের কিছু কাজকারবার আমার চোখে ধরা পড়ল যা কিছুটা হলেও আলোচনার দাবি রাখে বলে মনে করি। শুরু করি একটু ইতিহাস দিয়ে। উনিশ’শ’ তিরিশ সালে দুবাইয়ের স্থানীয় আরব ভাষাভাষী লোকসংখ্যা ছিল মাত্র তিরিশ হাজার। তখন সেখানে বিদেশীরা আসতও না, থাকতও না, থাকার কোন কারণও ছিলো না। ওই সময় দুবাইয়ের উপকূলে মাছধরা এবং মুক্তো কুড়ানো ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কোন সুযোগও ছিল না।
বর্তমানে সেই তিরিশ হাজার মানুষ বেড়ে হয়েছে চার লাখের একটু বেশি( সংযুক্ত আরব আমিরাত না শুধু দুবাইয়ের। এরা সবাই দুবাইয়ের নাগরিক। এছাড়া সেখানে আছে আরো ২-৩ লাখ ইরানি বংশোদ্ভুত লোক। দুবাইয়ে তাদের ষোলআনা নাগরিক অধিকার আছে কিনা এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হতে পারিনি,তবে তারা বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুবাইয়ে ইরানিদের বিনিয়োগ প্রায় তিরিশ হাজার কোটি ডলার। সেখানে ভারতীয়দেরও বড় বিনিয়োগ আছে। শুধু আবাসন খাতে তারা লগ্নি করেছে ছয়শো কোটি ডলার। দুবাইয়ে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিরা খাটাচ্ছে তাদের তাগড়া তাগড়া পুঁজি! পাকিস্তানের বেশিরভাগ বড়-মাঝারি মানের ব্যবসায়ীর দুবাইতে বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট আছে।
পুঁজিপতি বাদেও রুজিরুটির সন্ধানেও কী পরিমাণ লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দুবাইয়ে এসে জড়ো হয়েছে তা জানলে যেকেউ অবাক না হয়ে পারবেন না। আজকাল দুবাইয়ে রাতের বেলা থাকে পঁচিশ লাখ লোক এবং দিনে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ। অর্থাৎ আশপাশ শারজাহ-আজমান থেকে প্রতিদিন দশ-পনের লাখ লোক দোকানদারি এবং চাকরিবাকরির জন্য এসে ভিড় করেন দুবাই শহরে। দুবাইয়ের মোট জনসংখ্যার পঁচাশি শতাংশই বিদেশী। তার মাঝে বেশিরভাগই ভাঁড়তীয়, পাকিস্তানি, ফিলিপিনো, নেপালি, শ্রীলংকান ও বাংলাদেশী। অবশিষ্ট পশ্চিমা ও অন্যান্য দেশে কয়েক লোক তারা বেশিরভাগই বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী আর পেশাজীবী।
দুবাইতে বছর দেড়েক থাকার সময় চলার পথে, কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন সময়, চায়ের দোকানে এবং বিভিন্ন পার্কে যাদের সাথে কথা হয়েছে, বিভিন্ন কাজকর্মে সবচে বেশি আন্তরিকতা -সহযোগিতা – আতিথিয়েতা পেয়েছি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে। আমাদের দক্ষিণ ভাঁড়তীয় কোম্পানির মাইক্রো ড্রাইভার ছিলেন পাকিস্তানি শেহজাদ। শেহজাদের বাড়ি পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের মীরপুরে। কয়েক রোজায় ডিউটি থেকে ফেরার সময় পুরো গাড়ির বিশ-বাইশ জন বাংলাদেশীকে ইফতার করিয়েছে অথচ এরমধ্যে অনেক বাঙ্গালী (ময়মনসিংহ- চাপাইনবাবগঞ্জ) রোজায় রাখেননি! কোম্পানি যখন বেতন দিচ্ছিলো না তখন এই শেহজাদের কাছে কথার ছলে আমার ক্যাম্পের বিশ জনের কষ্টের কথা বললাম সে নগদে এক হাজার দেরহাম দিয়েছিলো আমি না বলার পরও সে আমার পকেটে গুঁজে দিয়েছিল, অথচ তার বেতন ই ছিলো আড়াই হাজার দিরহাম। ভাঁড়তীয় কোম্পানির ঠিক করে দেওয়া ভাঁড়তী মুদি দোকান বাকি না দেয়ায় কোম্পানির পচাঁত্তর জন বাঙ্গালী যখন চিন্তায় উদ্বিগ্ন ঠিক তখনই এ শেহজাদ, এক পাকিস্তানি শাহ ফরমান ভাইয়ের দোকান বাকিতে মালামাল নেয়ার জন্য ঠিক করে দেয়!
ক্যাম্পে একদিন দুপুরে ভাত খেয়ে বেসিনে হাত ধুইতে গিয়ে দেখি পানি নিষ্কাশনের যে গর্ত ঐ গর্তে এক কেরালা মল ত্যাগ করেছে যা দেখে সাথে সাথে আমার বমি চলে আসে। আমি সাথেসাথেই চাঁটগাইয়া ভাষায় চিল্লাচিল্লি করে গালাগাল করতে থাকি। কোম্পানির ঐদিন কাজ ছিলো না বিধায় সব বাংলাদেশী -ভাঁড়তীয় ক্যাম্পেই ছিল। ওমা! দুই-তিন মিনিট পরে দেখি দশ-এগারোজন ভাঁড়তীয় প্লাস্টিকের লাঠি নিয়ে আমায় মারতে আসতেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে উপায়ান্তর না দেখে গাডার পরিষ্কারের শাবল নিয়ে নাড়ানাড়ি করতে থাকি, ছোট জায়গা বিধায় তারা সামনের দিকে এগোচ্ছে না। আমি এত জোরে চিল্লাচিল্লি করেও কোন বাঙ্গালী কে আমার পাশে পেলাম না এদেরমধ্যে আমার গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের কয়েকজন ছিলো। পরে আত্মরক্ষার্থে শাবল জোরে জোরে ঘোরাতে লাগলাম তাদের কয়েকজন ঘুরে গিয়ে পিছন থেকে আমার কোমর ধরে ফেলে আমার ঐ বিপদে শেহজাদ এসে দুই মাড়োয়ারি কে দুইহাত দিয়ে এমনভাবে তুলে ফেললেন তা দেখে অন্যরা সবাই পালিয়ে যায় আর আমিও মার খাওয়া থেকে বেঁচে গেলাম। অবশ্য পরে শেহজাদের এক হাজার দিরহাম দিয়েছিলাম তাও তিন মাস পরে।
সম্প্রতি দুবাই কয়েকটি চোখ জুড়ানো ও মন মাতানো আইকনিক স্থাপনা তৈরি করে বিশ্বকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। যেমনঃ বুর্জ খলিফা- পৃথিবীর সর্বোচ্চ টাওয়ার, বন্দর জেবেল আলীতে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কৃত্রিম পোতাশ্রয়, পাম জুমায়রা-দুনিয়ার বৃহত্তম মানবসৃষ্ট দ্বীপ, দুবাই মল- যখন তৈরি হয় তখন পৃথিবীর কোথাও এত বড় শপিং সেন্টার ছিল না। এ দুবাই মল নির্মাণের সময় আমার এখানে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল তিন মাস এখানেই শ্রম দিয়েছিলাম।
দুবাইয়ের সোনার বাজার আকারে এবং ব্যবসার লেনদেনে আজ অবধি বিশ্বে অতুলনীয়। ভারতীয় মাড়োয়ারিদের অনেক স্বর্ণের দোকান এ মার্কেটে রয়েছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইটের মতো এত বড় বহর অন্য কোন এয়ারলাইন্সের নেই। দুবাই মেরিনা, দুবাই ওয়াটারফ্রন্ট, দুবাই বিজনেস বে, এগুলোও আধুনিক দুবাইয়ের বিশেষ বিশেষ আকর্ষণ। তাছাড়াও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুবাইয়ের কয়েকটি বিশেষায়িত শিল্পের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফ্রি জোন- দুবাই ইন্টারনেট সিটি, দুবাই মিডিয়া সিটি, দুবাই এজুকেশন সিটি, দুবাই হেলথ কেয়ার সিটি, দুবাই স্পোর্ট সিটি, দুবাই টেকনোলজি সিটি, দুবাই সায়েন্স পার্ক, দুবাই বিজনেস পার্ক ইত্যাদি ইত্যাদি!
কী উন্নত কী উন্নয়নশীল সব দেশই নিজ দেশে বিদেশী পুঁজি ও বিদেশি বিনিয়োগ ডেকে আনে আপন দেশের কর্মসংস্থানের জন্য! অথচ দুবাই করেছে তার ঠিক উল্টোটা। দুবাইয়ের শেখ নিজ দেশে বিশাল অংকের দেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন, তবে দুবাইয়ানদের জন্য নয়, বিদেশিদের জন্য। এবং এর সবচেয়ে বড় উৎস দুবাইয়ের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি। অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে এর সূচনা হয় ১৯৩৭ সালে যখন এম্পায়ার এয়ারলাইন্স-এর ১০/১২ সিটের একটি ছোট বিমান অবতরণ করে ছোট্ট দুবাই এয়ারপোর্টে।
বর্তমান দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪ টা বিশাল বিশাল টার্মিনাল আছে। সেখানে ১২০ টি এয়ারলাইন্স উঠানামা করে এবং বিশ্বের ২৬০ টি গন্তব্যে যায়। দুবাই এয়ারপোর্টের ৩ নাম্বার টার্মিনাল তৈরির সময় লিফট সহকারী হিসেবে আমার ৩ মাস কাজ করার সময় দেখেছি এক মিনিটে পাঁচটি বিমান নামতে আর তিনটি উঠতে। আজকাল দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ৫ কোটি যাত্রী যাতায়াত করে। ২০২০ সালে ১০ কোটি যাত্রীর আনাগোনা এবং ৪০ লাখ টন কার্গো ওঠানামার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। টার্গেট হিট করতে পারলে ৪ বছর পর দুবাইয়ের জাতীয় আয়ের ১/৩ ভাগ আসবে শুধু এভিয়েশন খাত থেকে। দুবাইয়ের সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে। সারা দুনিয়ার ২/৩ ভাগ জনগোষ্ঠীর বসবাস দুবাই থেকে মাত্র ৮ উড্ডয়ন ঘন্টা দূরে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে সর্বসাকুল্যে ১২-১৩ লাখ বাংলাদেশী কাজ করছে যার মধ্যে ৯০% ই দক্ষ আর অদক্ষ শ্রমিক। বাদবাকি পেশাজীবী ও ছোট -মাঝারি ব্যবসায়ী। একমাত্র বাংলাদেশীরাই ৪-৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এদেশে আসে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের লোকেরা নামমাত্র টাকায় দুবাইয়ে কর্মসংস্থানের জন্য আসে। দুবাইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজ দেশের মানুষের প্রতি আচরণ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে নিকৃষ্ট। যেসব দেশের মানুষের সাথে মিশেছি শুধুমাত্র পাকিস্তানি ও ইন্দোনেশিয়ানিদের আন্তরিকতা দেখে অভিভূত হয়েছি, আশ্চর্য হয়েছি।
সবশেষে আমার আরেকটি পর্যবেক্ষণের কথা বলেই শেষ করবো। বর্তমানে দুবাইয়ে মাঝারি এবং বড় আকারের ৪’শ হোটেল রয়েছে। শুনেছি তারা আরও ৭’শ হোটেল বানাচ্ছেন। এছাড়া দুবাইয়ে রয়েছে শত শত হাইরাইজ বিল্ডিং। এবার আসি আসল কথায় দুবাইয়ে অবস্থানরত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলে জেনেছি দুবাইয়ের প্রথম ও প্রধান আকর্ষণ বুর্জ খলিফাসহ প্রায় সবক’টি বড় বড় দালানের প্রায় অর্ধেক খালি পড়ে আছে। আশ্চর্যের বিষয় এমতাবস্থায়ও দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট এর ভাড়া কিংবা দাম কিছুই কমছে না! বরং আরো নতুন নতুন দালানকোঠা আস্তে আস্তে মাটি ফেঁড়ে উপরের দিকে উঠছে। কোন অর্থনীতির তত্ত্ববলে এমন হচ্ছে, অনেক ভেবেচিন্তেও আমি তার হদিস পাইনি। না পেয়ে আমার পরিচিত কিছু চৌকশ বন্ধু অর্থনীতিবিদের কাছে আমি সবিনয়ে একটি প্রশ্ন রেখেছিলাম, দুবাই -অর্থনীতির রহস্যটা কি? আমার প্রশ্ন পেয়ে সবাই নিরব ছিলেন। এ প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত জানতে আরও সময়ের প্রয়োজন।