আখেরি জামানা তত্ত্ব: বিবরণ ও বাস্তবতা

:: এরশাদ নাবিল খান ::

হজরত সোলায়মান (আঃ) এর অধীনস্থ ছিল মানুষ, জ্বীন, প্রানীজগত এবং বাতাস (সম্ভবত আবহাওয়া)। তিনি দোয়া করেছিলেন এদের কর্তৃত্ব যেন আর অন্য কোন শাসককে না দেয়া হয়। জ্বীন সংক্রান্ত একটি হাদিসে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাঃ এই বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। বনি ইসরাইলকে আল্লাহ ক্ষমতাচ্যুত করার পর তারা আর কখনোই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেনা এবং আসেননি।

এখনকার ইজরায়েলের শাসকরা কেউ-ই সেমাইট জিউ বা বনি ইসরাইল না। এরা White Caucasian (Khazar) converted jew. এরা পুরাপুরি ইউরোপীয়ান এবং বনি ইসরাইলের সাথে বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নাই। সম্ভবত এরাই ইয়াজুজ মাজুজের একটা অংশ। তবে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা সেমাইট জিউদের ইসরায়েলে একত্র করছে কারণ অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে দাজ্জাল হবে বনি ইসরাইলদের কিং। ভুল ভ্রান্তি থাকলে সংশোধন করা যেতে পারে।

ইসলাম ধর্মে ব্যক্ত ধারণা অনুযায়ী বনি ইসরাইল মানেই ইহুদি নয়। বনি ইসরাইল মানে হলো নবী ইয়াকুব বা জ্যাকব (আ.) এর ১২ জন সন্তানের বংশধারার লোকেরা। ইয়াকুব নবীর আরেক নাম ছিল ইসরাইল। সেখান থেকেই এসেছে বনি ইজরায়েল।

দাজ্জাল বা অ্যান্টি ক্রাইস্ট অথবা ইমাম মাহদি প্রসঙ্গ কোরআনে উল্লেখ নেই। আব্রাহামিক ধারার ধর্ম গুলোতে এই মিথ একটু এদিক সেদিক করে প্রচলিত আছে। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নতুন ও পুরাতন বাইবেল (তওরাত ও ইঞ্জিল)-এর বর্ণনা অনুযায়ী নবী ঈসা বা জেসাস(আ.)-এর পুনরাবির্ভাব, দজ্জাল বা অ্যান্টি ক্রাইস্ট-এর অভ্যুদয় এবং ইমাম মাহদি বা মেসিয়াহর আগমনের কথা কিছু হাদিস শরিফে ও সাহাবীদের কারো কারো বর্ণনায় এসেছে। আবার এসব ভবিষ্যৎ বর্ণনা নিয়ে মতভেদও আছে।

এদের মধ্যে আবার একটি গোত্র হারিয়ে যায়।তাদেরকে ‘লস্ট ট্রাইব’ বলা হয়। আদিতে বনি ইসরাইলিরা আরব ছিল না। আরবরা বনি ইসরাইলের জ্ঞাতি ভাই। নবী ইব্রাহিম(আ.)-এর পুত্র নবী ইসমাইল(আ.)-এর বংশধর। তারা বর্ণে অনেকটা ফর্সা। আর বনি ইসরাইল নবী ইসহাক বা আইজ্যাক(আ.)-এর বংশধারা থেকে উদ্ভূত। তারা আদিতে দেখতে কিছুটা কালো ও আফ্রিকাঘেঁষা চেহারার ছিল। এরা স্বতন্ত্র এথনিসিটি। তারা অতীতে নিজেরাও নিজেদের মধ্যে নানান যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়ে।

এই ১২ গোত্র নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে। নানা রক্তধারার সংমিশ্রণ ঘটে তাদের মধ্যে। তাদের কেউ কেউ আরব, পারস্য, আফ্রিকা, তুরস্ক, ইউরাপ, আফগানিস্তান এবং ভারতে ছড়ায়। বনি ইসরাইলিরা সকলে ইহুদি নয়। তাদের অনেকে মুসলমান, খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মে দীক্ষিত হয়। আবার ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ খাজারিরা বনি ইসরাইলি না হয়েও জুডাইজম বা ইহুদি ধর্মে দীক্ষিত বা কনভার্টেড জিউইশ বা জু’তে পরিণত হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জায়োনিস্ট বা ইহুদিবাদী।

ইহুদি ধর্ম বা জুডাইজম আর জায়োনিজম এক নয়। জায়োনিজম হচ্ছে ধর্মাশ্রয়ী একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারা বা মুভমেন্ট। এরাই মূলতঃ প্রচার, গোয়েন্দাগিরি, নাশকতা, অন্তর্ঘাত, যুদ্ধ, রক্তপাত, চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতার পথ ধরে বর্তমান ইজরায়েল রাষ্ট্রের পত্তন করেছিল। ইহুদিদের মধ্যে আরব যেমন আছে আবার ফিলিস্তিনি মুসলমানদের মধ্যেও তেমনই আরব ছাড়াও বনি ইসরাইলও আছে। তারা কনভার্টেড মুসলিমদের বংশধর। এরাও কিন্তু সেমাইট।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত তাই পুরোপুরি ধর্মীয় বা নৃতাত্ত্বিক লড়াই নয়। এটা মূলতঃ জায়নবাদ নামের সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে লড়াই। এ লড়াইয়ে আরব ও মুসলিম ছাড়াও অনারব, খ্রিষ্টান এমনকি ইহুদিদের অনেকেই সমর্থন করেন।

দাজ্জাল বা অ্যান্টি ক্রাইস্ট অথবা ইমাম মাহদি প্রসঙ্গ কোরআনে উল্লেখ নেই। আব্রাহামিক ধারার ধর্ম গুলোতে এই মিথ একটু এদিক সেদিক করে প্রচলিত আছে। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নতুন ও পুরাতন বাইবেল (তওরাত ও ইঞ্জিল)-এর বর্ণনা অনুযায়ী নবী ঈসা বা জেসাস(আ.)-এর পুনরাবির্ভাব, দজ্জাল বা অ্যান্টি ক্রাইস্ট-এর অভ্যুদয় এবং ইমাম মাহদি বা মেসিয়াহর আগমনের কথা কিছু হাদিস শরিফে ও সাহাবীদের কারো কারো বর্ণনায় এসেছে। আবার এসব ভবিষ্যৎ বর্ণনা নিয়ে মতভেদও আছে।

কেউ কেউ এসব বিবরণকে আবার একেবারে সহিহ মনে করেন না। তাদের মতে এসব কাহিনীর বেশির ভাগই ইসরাইলিয়াৎ প্রভাবিত। তবে এসব কনসেপ্ট, কাহিনী ও তত্ত্ব নিয়ে ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের মতন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও এস্কাটোলজি বা আখেরি যামানা তত্ত্ব নামে একটা ডকট্রিন বা সাবজেক্ট গড়ে উঠেছে। এই এস্কাটোলজির চর্চা ও অনুশীলন এবং এ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন মুসলমানদের অনেকেই।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *