বেনজীরের ১১৩ দলিলের সম্পদ ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-মেয়েদের নামে থাকা আরও ১১৩টি দলিলের সম্পদ ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট ক্রোক এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন রোববার (২৬ মে) এই আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়েদের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি জব্দ (ক্রোক) এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে তাদের নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেওয়া হয়। সেই সব সম্পদ ক্রোকের আদেশ চেয়ে দুদক আজ রোববার আদালতে আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন।

গত ২৩ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পদ জব্দের নির্দেশ এবং তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবগুলোও অবরুদ্ধ করতে আদেশ দিয়েছিলেন।

গত ২২ এপ্রিল বেনজীরের দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান হাইকোর্টে রিট করেন।

সম্প্রতি ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পুলিশের সাবেক আইজিপি ও র‍‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। আর তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানি থাকার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর থানার ১১৪টি দলিলের শত শত বিঘা জমি, সাভারের বেশ কয়েকটি জমি, বেনজীর পরিবারের সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা ইকো রিসোর্ট, একটি শিশিরবিন্দু নামে আরেকটি কোম্পানির সব সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্রের ৩০ লাখ টাকা, শান্তা ও লঙ্কাবাংলার বেনজীর পরিবারের শেয়ার ও আরও ১৫টি কোম্পানিতে বেনজীর পরিবারের বিভিন্নজনের নামে আংশিক শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকে চিঠি দেন জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। 

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর -এর নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, যা তার আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিক।

বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, চিঠিতে জানান সুমন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *