:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
নাটকীয়ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। ১১ বছর পর আইসিসির টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এর ফলে ভারত অপরাজিত থেকে দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলল।
কপিল দেব ও মহেন্দ্র সিং ধোনির পর ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো তৃতীয় অধিনায়ক হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন রোহিত শর্মা।
এর আগে ঘরের মাঠে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল রোহিত শর্মার ভারত। কিছুটা হলেও সেই হারের কষ্ট লাঘব হয়েছে এবার।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার ওই ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি লাইনে মিলারকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরালেন সুর্যকুমার যাদব। দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ শেষ হয়ে গেল সেখানেই। শেষ ওভারে এলো ৮ রান। ব্যর্থ হলো হেনরিখ ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫৪ রানের দুর্দান্ত সেই ইনিংস। ৭ রানের জয়ে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন ভারত।
ম্যাচ শেষে আবেগতাড়িত রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি কিংবা হার্দিক পান্ডিয়ার মুখটাই বলে দিচ্ছিল এই বিশ্বকাপের জন্য কতটা মরিয়া ছিল পুরো ভারত। বিরাট কোহলি ফাইনালের দিন চাপের মুখে খেললেন এবারের বিশ্বকাপে নিজের সেরা ইনিংস। ৫৮ বলে তার ৭৬ রানের ওই একটা ইনিংস ভিত গড়ে দিয়েছিল তাদের।
এরপর নতুন বলে জাসপ্রিত বুমরাহ এবং আর্শদ্বীপ সিংয়ের সেই চিরচেনা সুইং। আউটসুইং বলে ফিরলেন রিজা হেন্ডরিকস। স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হলেন মার্করাম। ত্রিস্টান স্টাবস এসেছিলেন ডি কককে সঙ্গ দিতে। ম্যাচটা সেখান থেকেই নিজেদের দিকে ফেরাতে শুরু করেছিল প্রোটিয়ারা। ৩৮ বলে ৫৮ রানের ওই জুটিটাই ভারতকে দেখাচ্ছিল স্বপ্নভঙ্গের ভয়।
অক্ষর প্যাটেল পুরো আসরেই ছিলেন দলের ক্রাইসিস ম্যান। ফাইনালেও ব্যাট হাতে তিন উইকেট পতনের পর ভারতের ইনিংস নিজের হাতে মেরামত করেছিলেন বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর বল হাতেও দিলেন ব্রেকথ্রু। স্টাবস সরে খেলতে চেয়েছিলেন। বুদ্ধিদীপ্ত বলে তাকে করলেন বোল্ড। কিন্তু এরপরেই শুরু হলো হেনরিখ ক্লাসেনের ঝড়।
২৭ বলে ৫৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর কক্ষপথে রেখেছিল বিধ্বংসী ওই ইনিংসটা। মাঝে কুইন্টন ডি কক ফিরলেন ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে। সম্ভবত নিজের শেষ ইনিংসটা খেললেন বার্বাডোজের এই মাঠেই। দক্ষিণ আফ্রিকা তবু স্বপ্ন দেখেছে। মাঠে যে ছিলেন ডেভিড মিলার। সেখান থেকে ম্যাচ হারার কোনো সুযোগই ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত হারল। প্রোটিয়ারা হেরে গেল বুমরাহ-পান্ডিয়া এবং আর্শদ্বীপের দুর্দান্ত ডেথ ওভার বোলিংয়ের কারণে। একের পর এক ডট বল ম্যাচটাকে কেড়ে নিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে। শেষ ৫ ওভারে এলো ২২ রান। ভারত আরও একবার ডেথ ওভারের কল্যাণে জয় পেল। তবে এই জয় তাদের এনে দিল বিশ্বসেরার খেতাব।
এর আগে বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভালো শুরুর আভাস দিয়েও পাওয়ার-প্লেতে খেই হারায় ভারত। ১.২ ওভারেই তারা তোলে ২৩ রান। এরপরই ১১ রানের ব্যবধানে হারায় ৩ উইকেট। তারপর অক্ষর প্যাটেল ও শিবাম দুবেকে নিয়ে কোহলির দারুণ দুটি জুটি, যা দলকে বড় স্কোর গড়তে সহায়তা করে।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ভারত। মার্কো ইয়ানসেনের করা প্রথম ওভারে তোলে তারা ১৫ রান। পরের ওভারে মাহারাজকে প্রথম দুই বলে দুটি চার মারেন রোহিত। চতুর্থ বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে হেনরিখ ক্লাসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই তারকা ব্যাটার।
৫ বলে ৯ রান আসে রোহিতের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা ঋষভ পন্তকেও ফেরান মহারাজ। সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল ওঠে যায় ওপরের দিকে। সহজ ক্যাচ হাতে জমা করেন উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক। ২ বল মোকাবিলায় রানের খাতা খোলা হয়নি পন্তের।
পঞ্চম ওভারে কাগিসো রাবাদ ফেরান সূর্যকুমার যাদবকে (৩)। ফাইনাল লেগে ক্যাচ নিয়েছেন ক্লাসেন। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কঠিন বিপর্যয়ে পড়েছিল ভারত। চতুর্থ উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কোহলি। শুরুর বিপর্যয় সামলে দুজনে গড়েন ৫৪ বলে ৭২ রানের দারুণ এক জুটি।
১৪তম ওভারে অক্ষর রান-আউট হলে ভাঙে এই জুটি। বেশ খানকিটা দূর থেকে দুর্দান্ত থ্রো করে অক্ষারকে ফেরান ডি কক। ৩১ বলে ৪৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ইনিংসে ছিল ৪টি ছক্কা ও ১টি চার। পঞ্চম উইকেটে শিবাম দুবে-কোহলি জুটি ৩৩ বলে ৫৭ রানের আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন।
১৯তম ওভারে ইয়ানসেনের শিকার হওয়ার আগে ৫৯ বলে ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন কোহলি। তারপর ১৬ বলে ২৭ রানে ফেরেন দুবেও। শেষ পর্যন্ত ভারত পায় ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের বড় স্কোর। এনরিখ নরকিয়া ২৬ রান দিয়ে ২টি, মহারাজ ২৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।