:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার (১১ আগস্ট) দুপুর সোয়া ২টায় দিকে দিল্লি থেকে তিনি ঢাকায় এসেছেন।
সালাহউদ্দিনকে বিমানবন্দরে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী স্বাগত জানান। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে ছিলেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিনকে আওয়ামী সরকারের মদদে গুম করে ভারতে পাঠানো হয়। ৬২ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়।
এর আগে গত ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে আসার জন্য ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করেন।
দেশে ফিরে রোববার বিকেলে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টা-১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে এবং অস্ত্রধারীরা মিলে উত্তরার একটি বাসা থেকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জায়গাটি ছিল কবরের মতো একটি কামরার মতো। আমার মনে হয়েছিল এটি কোনো বাড়ির নিচতলা হবে। কামরাটির আয়তন হবে পাঁচ ফিট বাই ১০ ফিট। টয়লেটের জন্য জায়গাটাতে কোনো রকম একটা ব্যবস্থা ছিল। আমাকে লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, কামরাটির বাইরে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান চালু থাকত এবং ছাদের সঙ্গে হাই পাওয়ার লাইট ছিল। এ ঘরটিতে আমাকে প্রায় ৬১ দিন রাখা হয়। এ সময়ে একদিনের জন্যও বের করা হয়নি। সেখানকার অন্যান্য বিষয়ে আমি বলতে চাই না। কারণ যারা এসব করেছে তারা তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের ইশারায় করেছে। আমি মনে করি এসব কাজের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে কোথাও না কোথাও তাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, যেদিন আমাকে নিয়ে আসে সেদিন দুপুরে একইভাবে চোখে কালো কাপড় বেঁধে আনুমানিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘোরানো হয়। থামার পর আমার মনে হলো যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চোখে দেখতে না পারায় ঠিক বুঝতে পারিনি। সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করল তারা। হয়তো তারা রাতের অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করছিল। এরপর কিছুদূর হাঁটিয়ে আবার কিছুদূর গাড়িতে করে একটা জায়গায় এনে আমাকে তোলা হয়। আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে সেটা সীমান্তের কাছাকাছি কোনো জায়গা হবে। সেখানেও কিছু সময় অপেক্ষা করা হয়।
তিনি বলেন, এতসবের পর সেখান থেকে একটি গাড়িতে করে আমাকে শিলংয়ে একটি মাটির ঘরে ফেলা হয়। পরে জানতে পারি জায়গাটির নাম গলফ লিংক। তখনো সূর্য ওঠেনি। অর্থাৎ তখনো সকাল হওয়ার বাকি ছিল।
সালাহউদ্দিন বলেন, এরপর আমি পরিচয় দিয়ে সকালে ভ্রমণকারীদের কাছে পুলিশে খবর দেওয়ার অনুরোধ জানাই। এরপর পুলিশ এসে আমাকে হেফাজতে নেয়।
তিনি জানান, এ সময়ে আমাকে ঠিকঠাক মেডিসিন সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। ভালো পানি ও তিনবেলা খাবার দিয়েছে। এর বেশি তাদের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে সালাহউদ্দিনকে খালাস দেন ভারতের একটি আদালত। তবে আদালতের রায়ে সেদেশের রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে থেমে যায় সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা।
প্রায় সাত বছর বিচার চলার পর গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। তিনি বেকসুর খালাস পান। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় সালাহউদ্দিন দেশে ফিরতে পারছিলেন না। পরে ট্রাভেল পারমিটের জন্য গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেন। ট্রাভেল পাসও পান তিনি। কিন্তু তখন দেশে ফেরেননি। প্রায় ৯ বছর ভারতে অবস্থান করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ ১৯৯১ সালে বিএনপির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তাকে বিএনপির জোট সরকারের সময়ে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। মেঘালয়ে যখন আটক হন তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে।