:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের অন্তত ৮ জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া এবং নোয়াখালীর কয়েকটি উপজেলার অবস্থা ভয়াবহ।
বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধারে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে। ফেনীর বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর বন্যা পরিস্থিতি আর কখনও এতটা ভয়াবহ হয়নি। বন্যার পানির তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে তিনটি সেতু ভেঙে গেছে।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতীর জেলা প্রশাসক তরিৎ কান্তি চাকমা তার সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টে এ কথা জানিয়েছেন। ত্রিপুরা টাইমসের খবরেও একই রকম তথ্য দেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এতে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে পানি নেমে আসছে।
এদিকে বন্যা আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বুধবার বিকালে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। তিনি বলেন, ফেনী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি এই মুহূর্তে বাড়ছে। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী, হালদা নদীর পানি ৭টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী সদর, দাগনভূঞা, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কয়েক লাখ মানুষ। ফেনী সদরের শশর্দী ইউনিয়নের দক্ষিণ আবুপুর, কুমিরা, উত্তর আবুপুর, শশর্দী, বাকগ্রাম, পাঁছগাছিয়া ইউনিয়নের জগাইর গাঁও, ঢমুরিয়া, উত্তর ডমুরিয়াসহ ১৫টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ১৫০টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফেনী-পরশুরাম ও ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়কের অনেক জায়গায় পানি উঠেছে। এতে অনেক এলাকায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক সাহাব উদ্দিন বলেন, রাত ৩টার দিকে বুক সমান পানি দিয়ে ছোট সন্তানকে মাথায় নিয়ে পরিবারসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। চারদিকে থইথই পানি। ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র কোনো কিছুই বের করতে পারিনি।
কিসমত শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়া বলেন, ঘরের ছাদ পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। আটকে পড়াদের উদ্ধারে দুই-একটি নৌকা কাজ করলেও পানির স্রোতের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।
পরশুরামের বক্সমাহমুদ গ্রামের সাংবাদিক মো. শাহআলম বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে কেউ বুঝতে পারেননি। হঠাৎ করে পানি বেড়ে গেছে। সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও বেশি ভোগান্তি হচ্ছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, বুধবার দুপুরে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এত পানি আগে কখনও দেখা যায়নি। মানুষ উদ্ধারেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, চিথলিয়া, সলিয়া ও অলকা এলাকায় অনেক মানুষ আটকা পড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু নৌকার সংকট ও তীব্র স্রোতের কারণে ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা জানান, পানিবন্দি লোকদের নিকটবর্তী বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ফেনীতে টানা তিনদিন ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত। বুধবার ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
ফেনী জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। জেলা শহর থেকে নদীপথ না থাকায় পরিবহণে করে স্পিডবোট নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় উদ্ধারে কাজ করছে বিজিবি সদস্যরা।
নোয়াখালী জেলা সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সদর উপজেলার পশ্চিম চর উরিয়ার বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, রান্নাঘরে ঢুকে গেছে। বাড়ির কেউই ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে আছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। এত পানি আগে দেখিনি।
নোয়াখালীর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ২০ বছরেও হয়নি। এছাড়া জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছে না।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সব মাধ্যমিক, প্রাথমিক শিক্ষপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের বলা হয়েছে। যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা করছি।
কুমিল্লায় গোমতী নদীতে হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে চরাঞ্চলে বসবাসকারী লাখ লাখ বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই নদীতে পানি বাড়তে থাকে। বুধবার দিনভর ভারি বৃষ্টির ফলে পানির গতি আরও বৃদ্ধি পায়। এতে নদীর বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে বসবাসকারী বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছে। তাছাড়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দাও বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় রয়েছেন। জেলার বিবির বাজার এলাকার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত গোমতী নদীর দুই পাড়ের বাঁধের ওপর হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলা সদর, শিবনগর, কালিকাপুর, বেগমাবাদ, চরবারক, বিনাইপার, রগুরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচকিত্তা গ্রামে বজ্রপাতে আমেনা বেগম মুহুনী (৫২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের আসমানিয়া বাজার ও নারায়ণপুর সংযোগ সেতুটি প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতী নদীতে ক্রমেই পানির চাপ বাড়ছে। উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারি বর্ষণে গোমতী নদী দিয়ে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫টি টিম বাঁধ পর্যবেক্ষণে গোমতীর পাড়ে অবস্থান করছে। কোথাও কোনো বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া বন্দরের ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমেছে। বন্দরের সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও। স্থলবন্দর সড়কের পাশে আমদানি-রপ্তানিকারকদের বেশ কয়েকটি অফিসও তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ২০টি গ্রামে। পানির তোড়ে গাজীরবাজার এলাকায় জাজি গাংয়ের ওপর অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, সকালে বন্দরে কয়েকটি মাছের পিকআপ ভ্যান এসেছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে বড় ট্রাকগুলো আসতে পারেনি।
ফেনীতে সর্বোচ্চ ৩১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ফেনীতে। এই সময়ে ফেনীতে ৩১২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকাতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
বুধবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদের দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া আগামী পাঁচ দিনের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।
ফেনীতে বন্যায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সাড়ে ৩ লাখ মানুষ
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফেনীর সাড়ে তিন লাখ মানুষ।
ফেনী সদর উপজেলা,পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া বন্যার কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় ডুবছে একের এক জনপদ। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত থেকেই জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার সব এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু এলাকায় পুরোপুরি সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতার কারণে দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান বলেন, জেলায় চার লাখ গ্রাহকের মধ্যে তিন লাখের বেশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাত ৮টা পর্যন্ত জেলার সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ছিল।
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ বলেন, আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভবন গুলোর নিচ তলায় পানি ঢুকে মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই পানি নামা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে। বন্যার পানি কমার আগে সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কত মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এই হিসাব তিনি দিতে পারেননি।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি
দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. আবু বাকের মজুমদার এক বার্তায় এ বিষয়ে জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে আসা উজানের নদীগুলোর বাঁধ খুলে দেওয়ায় নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, সিলেট, খাগড়াছড়ি সহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবলে পড়েছে। একই সঙ্গে, দেশের উত্তরাঞ্চলেও বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, এই কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি পাবলিক ফান্ড রেইজিং উদ্যোগ শুরু করছে। সকল ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং ভলান্টিয়ারদের আহ্বান জানানো হচ্ছে, আপনারা নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করুন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আপনাদের সাথে সমন্বয় করে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের জন্য রেসকিউ অপারেশন ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নির্দেশনা প্রদান করে বাকের বলেন, সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে, নিজ নিজ এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একাধিক হটলাইন নম্বর চালু করুন এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। নিকটস্থ নিরাপদ আশ্রয়স্থলগুলো চিহ্নিত করে তা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের জানিয়ে দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব।