■ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে আমরণ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
অনশনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান, গণিত বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গালিব হাসান, মার্কেটিং বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রায়হান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান লিমন, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী (আইবিএ) ফারহানা বিনতে জিগার ফারিনা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান ও কাজী মেহরাব।
অনশনরত শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান অন্বেষা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আমরা সব অযৌক্তিক কোটার বিলুপ্তি চেয়েছিলাম। পরবর্তীতে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তবে এখনো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বহাল রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনের আহত ও শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন। অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল না করা আমাদের গণঅনশন কর্মসূচি চলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, পোষ্য কোটা চিরতরের জন্য বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অন্তত একটা চাকরির ব্যবস্থা আছে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা এমন হাজারও শিক্ষার্থী আছে যাদের বাবা কৃষক কিংবা শ্রমিক। তাহলে তাদের সঙ্গে সব থেকে বড় বৈষম্য করছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকে এই বৈষম্যমূলক পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি অযৌক্তিক পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার নেতাকর্মীরা। এছাড়া একই দাবিতে গত তিন দিন ক্যাম্পাসে গণসংযোগ ও পোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এদিকে, পূর্বের ন্যায় কোটা বহালের দাবিতে আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। অন্যদিকে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন। এ ঘটনায় পরে পর দুপুর পৌনে ২টার শিক্ষার্থীরা বটতলা থেকে একটি মিছিল বের করে বিভিন্ন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। দুপুর সোয়া ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা বৈষম্য নিয়ে দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার মতো একটি অযৌক্তিক কোটা থাকতে পারে না। তবুও গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটা সংস্কার করেছে। কিন্তু আজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈষম্যের পক্ষে অবস্থা নিয়েছে। আমরা পোষ্য কোটার বাতিল চাই।
অন্যদিকে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামীকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
অফিসার সমিতির সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহমান বাবুল এবং কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বকশিসহ ছয় নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পোষ্য কোটায় ভর্তি বিভাগীয় সকল শর্ত বাতিল করে পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার দাবিতে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হলো। শুধু জরুরি পরিষেবাসমূহ আওতামুক্ত থাকবে তবে আন্দোলনের প্রয়োজনবোধে জরুরি সেবাসমূহ আওতাভুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পোষ্য কোটার সংস্কার করেছি। এ বিষয়ে আমরা একটা কমিটিও করেছি। এখানে সব পক্ষেরই দাবি আছে। আমরা ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের বিষয় যেন যৌক্তিক পর্যায়ে আসে আমরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করব। আমরা সব পক্ষকে সহযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটায় কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এক শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ মিলে সর্বোচ্চ ৪০ জন পোষ্য কোটা সুবিধা পাবেন। ভর্তির জন্য পাস নম্বর ৪০% (৩২ নম্বর) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের কৃষক ও শ্রমিকের সন্তানসহ সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য। পূর্বে স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, সন্তান ও দত্তক নেওয়া সন্তানের ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য থাকলেও এখন শুধুমাত্র সন্তানরাই এই সুবিধা পাবেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের চাকরি জীবনে একবারই এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি তাদের একাধিক সন্তান থাকে, তাহলে কেবল একজন এই সুবিধা পাবে। কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী যে বিভাগে কর্মরত, সেই বিভাগে তার সন্তান ভর্তি হতে পারবে না।