■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
প্রশিক্ষণ ক্লাসে এলোমেলোভাবে বসে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৫৯ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে সোমবার ১০ জনকে এবং বৃহস্পতিবার ৪৯ জনকে নোটিশ দেওয়া হয়। কয়েকজন এসআই নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় তাঁদের মধ্যে নতুন করে অব্যাহতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৪৯ জনকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি রাজশাহীতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই ২০২৩ ব্যাচে গত ৫ নভেম্বর থেকে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে আটটা চেমনি মেমোরিয়াল হলে প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের “আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধারার” ওপর ক্লাস ছিল। ওই ক্লাসে আইন প্রশিক্ষক হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. রেজাউল করিম, মো. নজরুল ইসলাম, মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেখ শাহীন রাজা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ক্লাসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান আসনে বসার সময় আপনি শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। রেজাউল করিমসহ সঙ্গীয় অন্যান্য পরিদর্শকেরা বারবার শৃঙ্খলার সঙ্গে বসার কথা বললেও আপনি তাঁদের নির্দেশ অমান্য ও কর্ণপাত না করে হইচই করতে থাকেন। পাঠদান চলাকালীন আপনার ক্লাসে কোনো মনোযোগ ছিল না এবং পাশাপাশি বসে কথাবার্তা বলছিলেন।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ক্লাস চলাকালীন আপনার এ ধরনের শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নিয়ম–শৃঙ্খলার পরিপন্থী মর্মে মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আপনার এহেন কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে ১৯৪৩ সালের পিআরবি বিধি অনুযায়ী আপনাকে কেন চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা তলবনামা প্রাপ্তির পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
এর আগে গত সোমবার ১০ জনকে একই ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়। সেখানে ১৬ অক্টোবর জিমনেশিয়ামে সন্ধ্যকালীন একটি ক্লাসে বসা নিয়ে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে এসআই পদে নিয়োগের জন্য ৮২৩ জনকে চূড়ান্ত করে প্রশিক্ষণের জন্য তাঁদের সারদায় পুলিশ একাডেমিতে পাঠানো হয়। ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর এসআই পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএনপি। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে পুলিশের নিয়োগ বাতিলের দাবি করে দলটি। এরপরই ২০ অক্টোবর সারদায় এএসপিতে কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়। পরে ২১ অক্টোবর ২৫২ জন এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর পাওয়া যায়।
প্রশিক্ষণ মাঠে নাস্তা নিয়ে হইচই করার কারণে সম্প্রতি ওই ব্যাচের ৭০৪ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে ২৫২ জনকে শোকজ করা হয়েছিল। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২২ অক্টোবর তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।