■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান পালন করেছেন অব্যাহতি পাওয়া ৪০তম ব্যাচের এসআই সদস্যরা।
রোববার সচিবালয়ের ৪ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন অন্তত দুই শতাধিক ক্যাডেট শিক্ষানবিশ সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই)।
এ সময় চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ট্রেনিং শেষ হওয়ার আগেই ৩২১ জনকে বাদ দেওয়া হয়। এখন তারা চাকরি পুনর্বহাল চান।
তারা দাবি করেন, ক্লাশ ও খাবার গ্রহণে বিশৃঙ্খলার নামে যে অভিযোগে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। এ সময় তারা সারদায় প্রশিক্ষণ নেওয়া এসআইদের সঙ্গে একযোগে পোস্টিং দেওয়ার দাবি জানান।
তারা বলেন, ‘আমরা রাস্তায় অবস্থান করতে চাই না। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আমাদের সঙ্গে যে বৈষম্য করা হচ্ছে, তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি’।
৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে ৮৫৭ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৮২৩ জন। ৫ আগস্টের পর মাঠে ও ক্লাশে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে চার ধাপে ৩২১ জন এসআইকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
একটাই চাওয়া—চাকরিতে পুনর্বহাল
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে মোট ৮২৩ জন ছিলেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে তাদের মধ্যে ৩২১ জনকে একাধিক দফায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি আটজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল প্রশিক্ষণ মাঠে উচ্চ স্বরে হইচই করা!
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাবেক ক্যাডেট এসআই মোস্তফা বলেন, ‘এক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের পর সামান্য কারণে আমাদের চাকরি হারাতে হলো। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান; এই চাকরিটাই আমাদের স্বপ্ন ছিল। আমাদের পুনর্বহাল করা হোক।’
আরেক আন্দোলনকারী সাজেদুল হাসান বলেন, ‘৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ব্যাচের চলমান ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই, পুনর্বহাল চাই।’
চাকরিচ্যুত এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটি অবিচার ছাড়া কিছুই নয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন।’
দয়া নয়, ন্যায্য অধিকার দাবি
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক নারী সাবেক এসআই বলেন, ‘আমরা কঠোর পরিশ্রম করে সব ধরনের পরীক্ষা পাস করেছি। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি স্যারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। আমাদের চাকরির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি, দেখি সরকার কী ব্যবস্থা নেয়।’
অনিশ্চিত ভবিষ্যের শঙ্কায়
এসআই হওয়ার স্বপ্ন দেখা এই তরুণদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তারা বলছেন, প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর আচমকা এমন সিদ্ধান্ত তাদের পরিবারকেও সংকটে ফেলে দিয়েছে।
চাকরিচ্যুত এক এসআই আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমার সাফল্য দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আজ আমি বেকার। আমাদের কি আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই?’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে দুই-আড়াইশত অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর সচিবালয়ের উল্টোদিকের রাস্তায়—জিরো পয়েন্টের কাছে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।’
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান
অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের চাওয়া সরকার তাদের অনুরোধ শুনুক এবং পুনর্বহালের মাধ্যমে তাদের স্বপ্নটাকে আবারও জাগিয়ে তুলুক। তারা বলছেন, তাদের অপরাধ যদি এতটাই গুরুতর হয়, তবে সেটা প্রমাণ করুন। কিন্তু সামান্য কারণ দেখিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না।
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই তরুণদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।