■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। শিক্ষার্থীদের সব দাবিই যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই (দাবি) সঙ্গে আমি একমত।’
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকালে সচিবালয়ের গেটে বিক্ষোভরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে উপদেষ্টা এ প্রতিশ্রুতি দেন।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণসহ পাঁচ দাবিতে আজ সকালে শিক্ষাভবন ঘেরাও করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে সচিবালয়ের গেটে অবস্থান নেন তারা।
দাবিগুলো হলো, স্বৈরাচার সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনা এবং সাত দিনের মধ্যে প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার নিয়োগ; সেনাবাহিনীর হাতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর এবং হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হল) এবং অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুরোনো ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার আমলে করা সব অনৈতিক চুক্তি বাতিল করা।
এসব দাবি নিয়ে সচিবালয়ের গেটে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা আমাদের ব্যর্থতা যে এখনও কেন শিক্ষার্থীদের রাজপথে থেকে দাবি আদায় করতে হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হল নির্মাণ এবং নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ। এই ক্যাম্পাসের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। একনেক ও ক্যাবিনেট সভায় কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম ক্যাম্পাসের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছিল সেখান থেকে যেন এক ইঞ্চি জমিও কমানো না হয়।’
শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকার মধ্যে একটা বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু তাদের কোনো হল নেই। তাদের শিক্ষাজীবন অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে। আমি প্রতিটি ঘটনা জানি, কারণ আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জগন্নাথের শিক্ষার্থী আছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি যে, আপনাদের এখানে আসতে হয়েছে এবং আপনাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি।’
‘আমরা বারবার বলেছি যে, এই আমলাতন্ত্র-সচিবালয় যেন ভুলে না যায় যে কাদের রক্তে, কাদের আত্মত্যাগে তারা আজ ওখানে বসেছে। তাই শিক্ষার্থীদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে এবং যৌক্তিক দাবির প্রতি সম্মান অবশ্যই করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীদের সেই সম্মান রাখতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আসে না। বরং তাদের যে আসতে হচ্ছে, তারা আসার আগে দাবি পূরণ হচ্ছে না, সেটাই আমাদের ব্যর্থতা,’ যোগ করেন নাহিদ ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যদিও এটা আমার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় না, কিন্তু যখন শুনেছি আপনারা এসেছেন আমি সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়েছি। আমি এসেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যিনি নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তাকে নিয়ে এসেছি। তার আজ প্রথম দায়িত্বের দিন, প্রথম কাজ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া।’
তিনি আশ্বাস দেন, ‘আপনাদের যে দাবি, ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে যুক্ত করা এবং কাজের ঠিকাদারির বিষয়টা বলেছেন সেনাবাহিনীকে দেওয়া, আমরা অবশ্যই এসব দাবি পূরণ করব। হল তিন দিনে তৈরি করে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু তিন দিনে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারব। আপনাদের সঙ্গে বসতে হবে কথা শুনতে হবে। ঠিকাদারের সঙ্গে আমরা এখনই কথা বলব এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে।’
এর আগে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের দাবিসহ ৫ দফা ও ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রসঙ্গের দাবিতে সচিবলায় ঘেরাও করে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
সোমবার (১১ নভেম্বর) শিক্ষা ভবনের সামনের মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দাবির স্মারকলিপি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু শিক্ষা সচিব দেখা না করায় সচিবালয় ঘেরাও করেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা অবস্থান করছেন।
১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছেন- আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান, সংগঠক একেএম রাকিব, রাইসুল ইসলাম নয়ন, আসাদুল ইসলাম, আবু বকর খান, নওশীন নাওয়ার জয়া, সোহান প্রামাণিক, মাসুদ রানা, নূর নবী, ওমর ফারুক, ফেরদৌস শেখ, অপু মুন্সী।
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি হলো- স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে; শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে; অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে; সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ (পাঁচশত) কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা না করায় শিক্ষা সচিবের ক্ষমা বা না চাইলে পদত্যাগের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টাকে আন্দোলনে হাজির হতে আহ্বান করা হয়েছে।
আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, আমরা স্মারকলিপি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছিলাম। কিন্তু সচিব নিজে দেখা না করে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা এটা মানি না। এখন আমাদের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টা এসে আমাদের দাবি শুনতে হবে।