২২৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে ছয় ব্যাংককে সহায়তা

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

২২ হাজার ৫০০ কোটি ছাপিয়ে টাকা দেশের দুর্বল ছয়টি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে পাঁচটি ব্যাংককে ভল্ট থেকে গত সোমবার সাড়ে ১৮ হাজার কোটি দেওয়া হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অন্য দুটি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। মূলত আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাপক অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা বেসরকারি খাতের ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহযোগিতা দিচ্ছি। আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য এটি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে শাখাগুলোয় যে অস্থিরতা ছিল সেটি থেকে বেরিয়ে এসেছি। শাখাগুলোয় রোববার থেকে সবাই (গ্রাহক) নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাবেন।

গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তোলার আহ্বান জানিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী রোববার থেকে কোনো গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত যাবে না।

গভর্নর বলেন, আমি বলেছিলাম টাকা ছাপাব না। কিন্তু সেটা থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছি। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সেই টাকা আবার তুলে নিয়ে আসব। কিন্তু মনিটরিং পলিসি আগের মতো টাইট থাকছে। এখানে নেট মানি ক্রিয়েশন হচ্ছে না। একদিকে সহায়তা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডের মাধ্যমে তুলে নিচ্ছি। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এই সহায়তা দেওয়া হবে। আমাকে ডিপোজিটর ও মূল্যস্ফীতি দুটিই রক্ষা করতে হবে। টাকা ছাপাব না বলেছিলাম। কিন্তু মানুষের অবস্থার কি পরিবর্তন হয় না?

আগের সরকারও টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করেছিল, আবার এখনো দেওয়া হচ্ছে—তাহলে তফাৎ কি থাকল এমন প্রশ্নের উত্তরে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক থেকে এখন আর টাকা চুরি হচ্ছে না। আগে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেয়ার পর টাকা বাইরে চলে গেছে। কিন্তু এখন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আগে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। কিন্তু এখান ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংকের বোর্ড চেঞ্জ হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে তদারকি করা হচ্ছে।’

বিগত দিনে যারা অনিয়মে যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সামনের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। নিদিষ্ট অভিযোগ না পেলে আমি নিজ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেব না। এখানে দলাদলি আছে। লাল, নীল দলের প্রতিনিধিত্ব না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হয়ে কাজ করেন।’

বর্তমানে ব্যাংক খাতে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। হয়তো ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু কোনো তথ্য গোপন করা হবে না। এখনো সব চিত্র সামনে আসেনি। তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আবার কাজ করছি। সঠিক তথ্য নিয়ে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক খাতে যা খারাপ হওয়ার তা আগেই হয়েছে। কিন্তু সঠিক অ্যাকাউন্টিংয়ের অভাব ছিল। সেটাকে আমরা সঠিক করার চেষ্টা করছি।’

গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, নতুন করে আর টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না। 

গত ১১ নভেম্বর ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর। বৈঠকে তিনি বলেন, আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকে আরও বেশি অর্থ সহায়তা দিতে হবে সবল ব্যাংকগুলোকে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *