ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে খেলাপি ঋণে জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে বৈঠকে দুই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে ইউসিবি নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আরিফ কাদরীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

উচ্চ খেলাপি ঋণে জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংককে অধিগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউসিবি। ২০২২ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান ছিল ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

২০২২ সাল শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ২৫ শতাংশ ছিল খেলাপি ঋণ। এর বিপরীতে ২০২২ সালে ৪০২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করা ইউসিবির খেলাপি ঋণ ছিল বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউসিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নেওয়ায় ইউসিবি আগ্রহ দেখিয়েছে। 

এছাড়া কোনো ব্যাংক স্বেচ্ছায় দুর্বল ব্যাংককে অধিগ্রহণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সহায়তা দেবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান স্পন্সরদের মূল্যায়নের পর ন্যাশনাল ব্যাংকে কোনো অংশীদারিত্ব থাকার সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংক পুরনো ব্যাংকগুলোর একটি। লোকসান করলেও রেমিট্যান্স আনার নেটওয়ার্কসহ এর কিছু সক্ষমতা রয়েছে। রফতানি বাণিজ্যও ভালো।’

ব্যাংকটি উদ্ধারে আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ পাওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, অধিগ্রহণের পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে এর আগে একীভূতকরণ ইস্যুতে ইউসিবি এবং এনবিএল’র ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল। অপরদিকে ইউসিবির আর্থিক ভিত্তি সবল। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করেছে, যেখানে স্বেচ্ছায় এবং বাধ্যতামূলক-দুইভাবে দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ হওয়ার বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি খাতের এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা একীভূত হওয়ার বিষয়ে এমওইউ সই করেছে। আর গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আর গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্প্রতি একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে স্বেচ্ছায় ও বাধ্যতামূলক-দুইভাবে দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

গত এক মাসে এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১০টি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই বৈঠকেও বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

এর আগে সরকারি দুটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে। একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে অনিয়ম-জালিয়াতিতে বিভিন্ন সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) শ‌রীয়াহভি‌ত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা একীভূত করা প্রথম সিদ্ধান্ত। গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়। পদ্মা ব্যাংকের পর সরকারি খাতের দুই ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় সরকার।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *