■ ক্রীড়া প্রতিবেদন ■
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ৪৯.১ ওভারে ১৯৮ রানেই অলআউট বাংলাদেশ যুব দল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে অলআউট হয় ভারত।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে মাত্র ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ফাইনালে ভারতের হয়ে জয়ের স্বাদ না পাওয়ার এমন ঘটনা যুব এশিয়া কাপে এই প্রথম।
বাংলাদেশের পেস আক্রমণ আজ যেন ছিল অপ্রতিরোধ্য। দ্বিতীয় ওভারে আয়ুশ মাত্রেকে বোল্ড করে ভারতীয় শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন আল ফাহাদ। পঞ্চম ওভারে ১৩ বছর বয়সী বিস্ময়-বালক বৈভব সূর্যবংশীকে ৯ রানে আউট করেন বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধা। সেমিফাইনালে দুর্দান্ত ব্যাট করা সূর্যবংশী আজ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
পেসার রিজান হাসানও অসাধারণ পারফর্ম করেন, ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে সিদ্ধার্থকে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান ও কেপি কার্তিকেয়া কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও, পেসার ইকবাল হোসেন ইমনের জোড়া আঘাতে তাদের সেই চেষ্টায় ভাটা পড়ে।
ইমন ২১তম ওভারে দুই বলে কার্তিকেয়া (২১) এবং নিখিল কুমারকে (০) ফিরিয়ে দেন। এরপর আল ফাহাদ ও ইমন মিলে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে একের পর এক আঘাত হানেন।
ভারতের অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ৩২তম ওভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল হাকিমের অফ স্পিনে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ভারতের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। বাংলাদেশের পেস ও স্পিনের সমন্বয়ে দুর্দান্ত এই জয়ে আরও একবার প্রমাণ হলো, যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সেরা।
এর আগে, ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারতের অধিনায়ক মোহামেদ আমান। ২০২৩ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে সেমিফাইনালে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারতের। সেবার ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দেখা হলো ফাইনালে। ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ খেলতে থাকে তুলনামূলক রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। পাওয়ারপ্লেতে ১ উইকেটে ৪১ রান তোলে বাংলাদেশ।
প্রথম ১০ ওভার পেরোনোর পর কিছুটা চাপে পড়েন তামিমরা। ২৫ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৬ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম উইকেটে থিতু হওয়ার পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় করেন ১৬ রান। কিরণ চোরমালের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে যুধাজিত গুহর তালুবন্দী হয়েছেন তামিম।
চাপে পড়া বাংলাদেশকে এরপর টেনে তোলেন শিহাব জেমস ও রিজান হোসেন। চতুর্থ উইকেটে শিহাব ও রিহান করেছেন ৬২ রানের জুটি। বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই শিহাব তাঁর উইকেট হারিয়েছেন। ৩২তম ওভারের শেষ বলে শিহাব স্লগ সুইপ করতে যান আয়ুশ মাত্রেকে। এজ হওয়া বল লং অফে ধরেছেন আন্দ্রে সিদ্ধার্থ।
৬৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করেছেন শিহাব। এখান থেকেই ধস নামতে থাকে বাংলাদেশের ইনিংসে। রানরেটও কমতে থাকে। ১৯০ বাংলাদেশ করতে পারবে কি না, সেই শঙ্কাও জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ করেছে ২০০ ছুঁই ছুঁই স্কোর। ৪৯.১ ওভারে ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় তামিমের দল। ৩ উইকেটে ১২৮ রান থেকে ১৯৮ রানে অলআউট, অর্থাৎ ৭০ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে শেষ ৭ উইকেট।
দলের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন রিজান। ৬৫ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৩ চার। ৪৯ বলে ৩৯ রান আসে ফরিদ হাসানের ব্যাট থেকে। ভারতের হার্দিক রাজ, চেতন শর্মা ও যুধাজিত পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।
টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপ জয়ের আনন্দে ভাসছে বাংলাদেশের যুব ক্রিকেট দল। সবার চোখে-মুখে ছিল গর্বের হাসি। এই জয়ের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের ক্রিকেট তারকাদের আরও একবার তাদের সামর্থ্যের জানান দিল বাংলাদেশ।
এই জয় শুধু একটি শিরোপার নয়, বরং ভবিষ্যতের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। যুবারা দেখিয়ে দিয়েছে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনায় তারা আরও অনেক দূর যেতে প্রস্তুত।
গত চার যুব এশিয়া কাপে তৃতীয়বার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ যুব এশিয়া কাপে রানার্সআপ, ২০২৩ ও ২০২৪-এ চ্যাম্পিয়ন। মাঝে ২০২০ যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ভারতের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়।
অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আন্তর্জাতিক বিজয়ের জন্য গর্বিত জাতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
এর আগে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ যুব দল : ১৯৮/১০, ৫০ ওভার (জাওয়াদ ২০, আজিজুল ১৬, শিহাব ৪০, রিজন ৪৭, ফরিদ ৩৯, মারুফ ১১; যুধজিৎ ২/২৯, চেতন ২/৪৮, হারদিক ২/৪১)।
ভারত যুব দল : ১৩৯/১০, ৩৫.২ ওভার (সিদ্ধার্থ ২০, কার্তিকিয়া ২১, আমান ২৬, হারদিক ২৪; আজিজুল ৩/৮, ইমন ৩/২৪, ফাহাদ ২/৩৪)।
ফল : বাংলাদেশ যুব দল ৫৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ইকবাল হোসেন ইমন।
টুর্নামেন্ট সেরা : ইকবাল হোসেন ইমন।