■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সোমবার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন তেল ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।
ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন থেকে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকায়, যা ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এই দুটি ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকর হবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ইন্ডাস্ট্রির অংশীজনেরা জানিয়েছেন, আজকে থেকেই সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তবভিত্তিকভাবে সবকিছু বিশ্লেষণ করে দাম নির্ণয় করেছি। বাস্তবভিত্তিকভাবে মূল্য নির্ধারণ করায় আমরা আশা করি, স্পেকুলেশন বা অনুমাণের ওপর নির্ভর করে চলাটা আজকে থেকে বন্ধ হবে।’
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
একজন সাংবাদিক বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে প্রশ্ন করেন, দাম আট টাকা (এক কেজি) বাড়ানোর জন্যই কি ভোজ্যতেলের ঘাটতি দেখানো হলো এবং এটা কি ইচ্ছে করে হয়েছে কি না? এর উত্তরে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আট টাকা বাড়ানোর জন্য ঘাটতি দেখানো হলো কি না, আমি জানি না।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে তেলের ঘাটতি রয়েছে, এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, ভোক্তারাও অস্বস্তিতে রয়েছেন। সেজন্য আমরা তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি বাজারে আর তেলের ঘাটতি হবে না।
তিনি বলেন, গত এপ্রিলে ১৬৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে দাম অনেকটাই বেড়েছে। যে কারণে দেশে স্থানীয় মজুতদারি বেড়েছে। তেলের পযাপ্ত মজুত রয়েছে। অনেকে কিনে মজুত করেছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা সেটা মনিটরিং করছি। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে এখন একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর সমস্যা হবে না।
এ সময় ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিরগুলোর সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, কয়েকদিন থেকে আমারা কীভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছি। বিশ্ববাজারে প্রতি টন তেলের দাম ১২০০ ডলারে উঠেছে।
উপদেষ্টা বলেন, যদিও এখন আমাদের প্রতি টন তেল ১২০০ ডলারে খালাস হচ্ছে। আরও দাম বাড়তে পারে, সে উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে। কারণ বিশ্ববাজার এখনো স্থিতিশীল নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হচ্ছে। তবে আলুর দামে অস্থিরতা এখনো আছে। নতুন আলু উঠলে দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে কমে আসবে বলে আশা করছি।
এদিকে, সরকার দাম বাড়ানোর আগ থেকেই রাজধানীর বাজারে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। প্রায় উধাও হয়ে গেছে। আর পাওয়া গেলেও শর্তসহ বেশি দাম রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক থেকে দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। এরমধ্যে দুই-একটি কোম্পানি করলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।