চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

■ গোপলগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ■

দেশে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জ জেলার। আগামী দুদিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমে জেলার ও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন বুধবার তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে আজ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। সকাল ৯টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোটা ভাইরাস ও আবহাওয়াজনিত কারণে আক্রান্ত হয়ে জেলার সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৩০০ এর অধিক ডায়রিয়া রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই হলো শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রোগী। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৪০০-৫০০ শতাধিকেরও অধিক রোগী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদী।

চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, ‘শীতে বাইরে বের হতে পারছি না। হাত কালা (ঠান্ডা) হয়ে যাচ্ছে। রিকশায় প্যাডেল মারা যাচ্ছে না। আয়রোজগার কমে গেছে। আর দুপুর পর্যন্ত তেমন ভাড়া-ভুতো হচ্ছে না।’

দিনমজুর সোহান আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে কামলা খাটার জন্যে বাড়ি থেকে বড় বাজারে আসি। এখান থেকে কোনো একটা কাজ হয়। লোকজন দিনমজুর লাগলে এখান থেকে আমাদের নিয়ে যায়। গড়ে প্রতিদিন বড় বাজারে এক শ থেকে দেড় শ দিনমজুর আসে। তবে শীতের কারণে কদিন বেশির ভাগের কাজ হচ্ছে না। খুব বিপদে আছি।’

বৃদ্ধ দিনমজুর আবুল কাশেম বলেন, ‘বয়স বেশি বাপু, কাম (কাজ) করব কীভাবে। পরিবার চালাতে গিয়ে তাও কষ্ট করছি। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার শীত সহ্য করতেই পারছিনে। কেউ কেউ ইয়ার্কি করে বলছে, কাশেম এবারের শীতে মরবে।’

অন্যদিকে গোপালগঞ্জে সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি, রয়েছে ঘন কুয়াশাও। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। স্কুল-কলেজে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। শীতে কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আজ গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়, যা ছিল গত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *