■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
চিটাগাং কিংসকে নাটকীয় ফাইনালে ম্যাচে তিন বল এবং ৩ উইকেট হাতে রেখেই বিপিএলে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তামিম ইকবালের বরিশাল।
বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল। এর আগে বিপিএলে সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড ছিল। ২০২৩ আসরের ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারানোর পথে সেই কীর্তি গড়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২০২৫ সালে একাদশ বিপিএলের ফাইনাল সেটিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে তিন বল হাতে রেখেই জয় ছিনিয়ে নেয় তামিম ইকবালের দল। চিটাগাং কিংসের ব্যাটিং তাণ্ডবের পর শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিং বরিশালকে আটকাতে পারেনি।
স্টেডিয়ামের প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের ৮৫ শতাংশই ফরচুন বরিশালের লাল জার্সি পরে আসা সমর্থক। বরিশালের কোনো কোনো দর্শক ফাইনাল দেখতে রেপ্লিকা লঞ্চও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা গতবারের মতো এবারও লঞ্চে করে বিপিএলের সোনালি শিরোপাটা নিয়ে যেতে চেয়েছেন। তা পেরেছেনও, চিটাগাং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এবারও বিপিএলের ট্রফি উঠে গেল লঞ্চে।
ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল চট্টগ্রাম কিংস। খাজা নাফায় ও পারভেজ ইমন মিলে গড়ে তোলেন ১২১ রানের দুর্দান্ত জুটি। নাফায় ৪৪ বলে ৬৬ রান করে ফিরলেও ইমন ছিলেন আরও বিধ্বংসী। মাত্র ৪৯ বলে ৭৮ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষদিকে গ্রাহাম ক্লার্ক ২৩ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন, ফলে চট্টগ্রাম ২০ ওভারে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে।
বরিশালের বোলিং আক্রমণ ছিল তুলনামূলক দুর্বল। মোহাম্মদ আলী ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন, আর ইবাদত হোসেন ৩৫ রান খরচায় পান ১ উইকেট। তবে তানভীর ইসলাম (২ ওভারে ৪০ রান) এবং রিশাদ হোসেন (২ ওভারে ২৬ রান) ছিলেন বেশ ব্যয়বহুল।
১৯৫ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে বরিশাল। তামিম ইকবাল শুরু থেকেই ঝড় তোলেন, মাত্র ২৯ বলে ৫৪ রান করেন ৯টি চার ও ১টি ছক্কায়। তবে শরিফুল ইসলামের করা ৯ম ওভারে এক ওভারে দুটি উইকেট পড়ে গেলে ম্যাচ জমে ওঠে।
এরপর দায়িত্ব নেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্স। ২৮ বলে ৪৬ রান করে তিনি বরিশালকে জয়ের পথে রাখেন। তবে শেষদিকে দ্রুত কিছু উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলে চট্টগ্রাম কিংস। ১৯তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নবী ফিরে গেলে শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮ রান।
রিশাদ হোসেন ৬ বলে ১৮ রানের এক ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন। ১৯.৩ ওভারে বরিশাল ১৯৫ রান তুলে ৩ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে।
এই জয়ে বিপিএল ফাইনালে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে চ্যাম্পিয়ন হলো ফরচুন বরিশাল। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে, শরিফুল ইসলামের ৪ উইকেট (৪-০-৩৪-৪) সত্ত্বেও চট্টগ্রাম শেষ পর্যন্ত হার মানে।
হুসেন তালাতের করা শেষ ওভারে ৮ রান দরকার ছিল বরিশালের। প্রথম বলে ছক্কা মেরে শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি রাখেন রিশাদ। পরের বলে এক রান এবং এক বল পর তালাতের ওয়াইড—ম্যাচ শেষ ওখানেই। শেষ একাদশ বিপিএলও, যেটিকে আরও বর্ণময় করেছে ম্যাচ শেষে হওয়া লেজার শো। বরিশালের লাল উৎসবটাও তাতে হয়ে উঠল আরও বর্ণাঢ্য।
কারা পেলেন কোন পুরস্কার:
চ্যাম্পিয়ন – ফাইনাল ম্যাচে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতল ফরচুন বরিশাল। একইসঙ্গে তারা পেল আড়াই কোটি টাকার অর্থ পুরস্কার।
রানার্সআপ – শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১৯৪ রানের পুঁজি নিয়েও জিততে পারেনি চিটাগং কিংস। ২০১৩ সালের পর বিপিএলে ফেরার আসরে রানার্স-আপ হলো তারা। ফলে তারা পেল দেড় কোটি টাকা।
ম্যান অব দা ফাইনাল – বড় লক্ষ্যে ঝড়ো ফিফটি করে ফাইনালের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন তামিম ইকবাল। ট্রফির সঙ্গে তিনি পেলেন ৫ লাখ টাকা।
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট – ব্যাট হাতে ১৪ ইনিংসে ৩৫৫ রান ও বোলিংয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে বিপিএলের এবারের আসরের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি পেলেন ১০ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার।
ইমার্জিং প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট – প্রথম পর্বে বাদ পড়া ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে ব্যাট হাতে পুরো আসরেই চমৎকার ছিলেন তানজিদ হাসান। ১২ ইনিংসে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে চার ফিফটিতে ৪৮৫ রান করে তিনিই জিতেছেন বিপিএলের প্রথম ইমার্জিং প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট পুরস্কার। ট্রফির সঙ্গে তার প্রাপ্তি ৩ লাখ টাকা।
টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান – আসরজুড়ে চমৎকার ব্যাটিংয়ে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে তিন ফিফটিতে ৫১১ রান করা মোহাম্মদ নাঈম শেখ জিতলেন সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার। ৫ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পেলেন তিনি।
টুর্নামেন্টের সেরা বোলার – রেকর্ড গড়া আসরে ১২ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়ে এবার সেরা বোলারের পুরস্কার জিতলেন তাসকিন আহমেদ। নাঈমের মতো তিনিও পেলেন ৫ লাখ টাকা।
টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডার – আসরজুড়ে উইকেটের পেছনে ১২টি ক্যাচ ও ২টি স্টাম্পিং করে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার জিতেছেন মুশফিকুর রহিম। তিনি পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১৯৪/৩ (পারভেজ হোসেন ইমন ৭৮*, খাজা নাফি ৬৬, গ্রাহাম ক্লার্ক ৪৪, শামিম হোসেন ২, হুসাইন তালাত ০*; মোহাম্মদ আলী ১/২১, এবাদত হোসেন ১/৩৫)
ফরচুন বরিশাল: ১৯.৩ ওভারে ১৯৪/৩ (তামিম ইকবাল ৫৪, কাইল মায়ার্স ৪৬, তাওহিদ হৃদয় ৩২, রিশাদ হোসেন ১৮*, মুশফিকুর রহিম ১৬; শরিফুল ইসলাম ৪/৩৪, নাইম ইসলাম ২/১৮, বিনুরা ফার্নান্দো ১/৪২)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।