খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটার পর হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাসপাতালের নিচ থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগতম জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি চেয়ারপারসনের কাছে নিয়ে গেছেন অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার।

হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে হাসপাতালে পৌঁছালে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জে এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম এসকান্দার প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।

বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসক দল প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করেন। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই ও জনস হপকিন্স এবং যুক্তরাজ্যে ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধান ও সহায়তায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা চলছে।

সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. রিচার্ড বিলি এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তার উন্নত ও সার্বিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং চলমান মেডিকেল ব্যবস্থাপনার আরও গভীর মূল্যায়নের জন্য হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে দুটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এরই মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মেডিকেল রিপোর্ট ও সাম্প্রতিক পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করেছে, যাতে তারা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং চিকিৎসায় সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

গতকাল (২ ডিসেম্বর) রাত আটটার পর খালেদা জিয়াকে দেখতে তিন বাহিনীর প্রধানরা এভারকেয়ারে গিয়েছিলেন। তারা মেডিকেল বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং রাত ৯টা ২০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বিদায় নেন।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।

গত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। 

এছাড়া হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশেই রয়েছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *