:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
৩২ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পরে আপিল বিভাগও বহাল রাখার পর সোমবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে তারা জামিনে মুক্ত হন।
বিএনপির এ দুই নেতার জামিনে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ।
পরে মির্জা ফখরুল ও আব্বাস গাড়িতে করে জেলগেইট দিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা হন।
গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন ফখরুল ও আব্বাসের আইনজীবীরা। পরের দিন তাদের জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আপিল বিভাগ কোনো আদেশ না দিয়ে রবিবার (৯ জানুয়ারি) শুনানির দিন ধার্য করে।
রোববার ফখরুল ও আব্বাসকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ফলে তাদের মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা থাকে না।
আজ সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের মুক্তির আদেশ পৌঁছায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরে জামিননামা যাচাই-বাছাই করে মুক্তি দেওয়া হয় তাদের।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের মুক্তির অপেক্ষায় দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা কারাগারের গেইটে অপেক্ষা করছিলেন। সন্ধ্যার দিকে যখন এই দুই শীর্ষ নেতা বের হয়ে আসেন তখন কারাগারের বাইরে অপেক্ষমান বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় দেখা যায়, দুই নেতার জামিনের সংবাদ পেয়ে কেরানীগঞ্জ ও ঢাকার আশেপাশের বিএনপির নেতাকর্মীরা দুপুর থেকে কারাগার প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের জামিনের বিষয়কে কেন্দ্র করে কারাগার কর্তৃপক্ষ কারাগার এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে।
কারাগারে আসা বন্দিদের আত্মীয়স্বজন ও দর্শনার্থীদের কারাগার এলাকায় প্রবেশে তল্লাশি করা হয়। বিকাল থেকে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস কারাগারের ফটকে অপেক্ষা করছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আরও অনেক নেতাকর্মী।
কারাগার থেকে বেরিয়ে নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতা। এ সময় ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতার দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটবে। কারাগারে আটকে রেখে আন্দোলন বন্ধ করে রাখা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী এখনও কারাবন্দি। দুঃখজনকভাবে তারা সবাই মানবেতর জীবনযাবন করছে। আমি অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি। অবিলম্বে সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
এর পরই ক্রিম কালারের গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন মির্জা আব্বাস। তিনি গাড়ির ওপর থেকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের জীবনে এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা, মানুষের ভাগ্যের কথা ও তাদের ভোটাধিকারের কথা বলতে গেছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যের কথা বলেছি, বাজার দরের কথা বলেছি। এটা কী আমাদের অন্যায় হয়ে গেছে? আমরা কী কোনো অন্যায় করেছি? আমরা কোনো অন্যায় করিনি, কোনো পাপ করিনি। এই সরকার আমাদের একে একে বেশ কয়েকবার জেলে নিয়েছে। নেতা-কর্মীদের কাছে থাকা থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে।
আমাদের মুক্তিটা নিঃসন্দেহে আনন্দের এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে রয়ে গেছে। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা বর্ণনা করতে পারব না।
সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমি পত্রিকায় দেখেছি সরকার মানবিকতার কথা বলেছে। তাই তাদের বলব, এই বন্দিদের প্রতি আপনারা মানবিক হন। এরা বন্দি নয়, এরা চোর নয়, এরা ডাকাত নয়। এরা সব রাজনৈতিক কর্মী। কারাবন্দি অবস্থায় নিজের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস।
এ সময় বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী জাকির হোসেন ও মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন।
সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ঘটনার পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে বিএনপির ২ হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
তাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয় ৭২৫ জনের। তবে নাম উল্লেখ করা বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ছিলেন না।
এ দুই নেতার বাসায় ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুজনকে প্রথমে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। এর প্রায় ১১ ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাদের পল্টন থানার বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।