:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
গত ২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠীর সব কটি শেয়ারের টানা দরপতনের ফলে ওই গোষ্ঠীর মোট বাজার মূলধনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার ৬৩২ কোটি রুপিতে।
রিপোর্ট প্রকাশের আগে আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির মোট বাজার মূলধন ছিল ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৮৮ কোটি রুপি। অর্থাৎ, ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর ক্ষতির পরিমাণ ১১ লাখ ৯৯ হাজার ২৫৬ কোটি রুপি।
ভারতের গুজরাট রাজ্যের ৬০ বছরের শিল্পপতি গৌতম আদানি ছিলেন পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনকুবের। এক মাসের মধ্যে আজ তিনি সেরা ধনকুবেরদের তালিকার ২৯তম স্থানে নেমে গিয়েছেন। তাঁর মোট সম্পদমূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২০ কোটি মার্কিন ডলার। যাঁকে টপকে হু হু করে বাড়িয়ে তুলেছিলেন সংস্থার সম্পদ, সেই মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ এ মুহূর্তে তাঁর প্রায় দ্বিগুণ—৮ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার।
আদানি গোষ্ঠীর ১০ সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আদানি গ্রিন এনার্জির। শেয়ারের বাজারমূল্য কমে গেছে ৮৪ শতাংশ। দরপতনের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার। দরপতন যথাক্রমে ৮৩ ও ৮১ শতাংশ। গোষ্ঠীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সংস্থা বলে পরিচিত আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারমূল্য কমেছে ৬৭ শতাংশ। এ সংস্থার ছাড়া ২০ হাজার কোটি রুপির ‘এফপিও’ পুরো বিক্রি হওয়া সত্ত্বেও ‘গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে’ আদানি গোষ্ঠী তা বাতিল করে দেয়। গৌতম আদানি ঘোষণা করেছিলেন, আস্থা যাতে না হারায় সে জন্য গ্রাহকদের সবার টাকা ফেরত দেওয়া হবে। বাজারের আস্থা অর্জনে গত এক মাসে এই গোষ্ঠী চেষ্টায় ত্রুটি রাখেনি। কিন্তু দরপতন তাঁর সাম্রাজ্যে ধস নামিয়েই চলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তাঁর নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন (এলআইসি) ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছে। অভিযোগের সত্যাসত্য গত এক মাসে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে শেয়ারের দরপতনের ফলে এলআইসির ‘লোকসান’ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি রুপি। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর ৭টি সংস্থায় এলআইসির মোট শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৮৩ হাজার কোটি রুপি। ২৩ ফেব্রুয়ারিতে তা কমে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ কোটি।
আদানি গোষ্ঠীর ৭ সংস্থায় যে দামে শেয়ার কিনে এলআইসি ৩০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছিল, তা ১১ শতাংশ কমে ২৭ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য মহুয়া মৈত্র গত শুক্রবার এক টুইটে এই ক্ষতির কথা লিখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে জবাবদিহি করতে বলেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘৩ হাজার ২০০ কোটি রুপি এখনো পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে এলআইসির। নির্মলা সীতারমণ, জনগণকে বিপদে ফেলে আদানিকে সমর্থন করার জন্য কোনো চাপ কাজ করেছে? আমরা জবাব চাই।’ টুইটের সঙ্গে মহুয়া ওই বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক রিপোর্টের প্রতিলিপি জুড়ে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
আদানিগোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি এবার সেই হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে লড়াইকে আইনের আঙিনায় নিয়ে আসতে চলেছেন। সেজন্য বিশ্বের সবচেয়ে দামি আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা নিউইয়র্কের ‘ওয়াচটেল, লিপ্টন, রোজ়েন অ্যান্ড কাটজ়’কে নিয়োগ করেছেন।
উল্লেখ্য, মার্কিন শর্ট-সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ গত ২৪ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে আদানিকে জালিয়াতির জন্য অভিযুক্ত করে। এর পর থেকে আদানির শেয়ারদরে ধস নামে।