:: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ::
চুয়াডাঙ্গায় বৃহস্পতিবার এই মৌসুমে দেশের মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া মাঝারি দাবদাহ থেকে আজ এটা তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
এই টানা তাপদাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র গরমে আর আগুন ঝরা আবহাওয়ায় সড়কে মানুষ ও যানবাহন চলাচল কমেছে।
প্রখর রোদের কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তীব্র গরমে বয়স্ক ও শিশুরা সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থতার পরিমাণও বাড়ছে। জেলা সদরের হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা।
তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে মানুষজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। জেলা সদরের হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত একটানা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ এপ্রিল অর্থাৎ গত মঙ্গলবার ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আজ ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দুপুরে।
একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগবালাই বেড়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গায় ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে আজ অন্তর্বিভাগে অন্তত ২৭০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাতেহ আকরাম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশির ভাগই গরমজনিত রোগে আক্রান্ত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত বছরের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল জেলায় ওই বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ১১ দিন আগেই আজ গত বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। গত বছরের ১৩ এপ্রিল এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বুধবার পর্যন্ত চলতি মৌসুমে মাঝারি দাবদাহ বিরাজ করছিল। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেখানে এক দিনেই তাপমাত্রার পারদ ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি বেড়ে ৪১ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। শুরু হয়েছে প্রচণ্ড তাপদাহ। আগামী বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। চলতি সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর দাবদাহ দেখা দিতে পারে।
রাকিবুল হাসান বলেন, প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসে তাপমাত্রা বেড়ে থাকে। এ ছাড়া কোনো কোনো বছর জুন মাসেও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ভৌগলিক কারণে এই চরম ভাবাপন্নতা দেখা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, আজ ১৩ এপ্রিল দুপুর ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এই মৌসুমের ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তিনি আরও বলেন, গত ২ এপ্রিল থেকে আজ ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এই চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হলো। আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে। আর আজ থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে তাপমাত্রা আরও বেড়েছে।
রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রাজশাহী শহরে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ। বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় শুষ্ক ও উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করছে সর্বত্র। এতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ঘর থেকে বের হলেই তীব্র দাবদাহে শরীর পুড়ে যাওয়ার অনুভুতি হচ্ছে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে চোখ মুখ ঠোট শুকিয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলবে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত দাবদাহ চলবে।
এদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই দাবদাহে। জীবিকার তাগিদে চরম কষ্টেও তারা কাজে বের হচ্ছেন। তবে গরমে লোকজনের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও কমেছে আয়।