চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

:: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ::

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৩ টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৩ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ মো. জামিনুর জানান, সোমবার বিকেল ৩ টায় এ মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন এ জেলায় অতি তাপদাহ চলছে। এ রকম তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো আভাস নেই।

২০১৪ সালের ২১ মে এ জেলায় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। সে হিসাবে ১০ বছর পর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্রিতে উঠলো।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী এই জেলায় ২০১৪ সালের ২১ মে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর গত ১০ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গত বছরের ১৯ ও ২০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে ২০১৫ সালের ২২ মে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৬ সালের ১১ ও ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৮ সালের ১৮ জুন ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০২২ সালের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। দু’দিন পর আবারও এ জেলায় তাপমাত্রার তীব্রতা বেড়ে গেছে। দু’দিনে এ জেলায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে। তীব্র রোদ আর গরমে রাস্তায় বের হতে পারছেন না মানুষজন। রোদে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। এ যেন একেবারে মরুভূমির তাপমাত্রা।

তীব্র রোদের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অনাহারে দিন পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। তবে রোদের এতো উত্তাপ যে মাথা ঘুরে যাচ্ছে। হিট স্ট্রোকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ হাটখোলা এলাকার বাসিন্দা পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লা বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে তাঁর মাঠে লাগানো ১ বিঘা জমির কলার খেত, ২ বিঘা কচু এবং ১০ কাঠা জমির শসা পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। সেচ দিয়েও রক্ষা করা যায়নি। একই এলাকার বাবু মিয়ার ১ বিঘা জমির কচু, ১০ কাঠা জমির ঢ্যাঁড়স ও ১৫ কাঠা জমির উচ্ছেখেত (করলা) গরমে শেষ হয়ে গেছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি বিভাগ বোলচে ধানের জমিতি ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি দি রাকতি। এভাবে পানিতি যেভাবে খরজ হচ্ছে, সপ ধান বিক্রি করেও খরজে ট্যাকা ওটপে না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ জমির ধান কেটে কৃষকেরা ঘরে তুলেছেন। বাকি ধানগুলো দানা পর্যায়ে আছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ৮০ শতাংশ ধান মাঠ থেকে সংগ্রহ শেষ হবে।

কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন, গরমে সবজিখেত চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত সেচ দিতে গিয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, জেলার চারটি ইউএনওর মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও মুখে খাওয়ার স্যালাইন (ওআরএস) বিতরণ শুরু হয়েছে ২৭ এপ্রিল থেকে। সদর পৌর এলাকায় কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাঁদের শিগগিরই স্থানীয়ভাবে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ে ১০ হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট চাওয়া হয়েছে। হাতে পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই বিতরণ করা হবে।

এদিকে অতি তীব্র তাপদাহে সোমবার প্রাইমারি স্কুল খোলা থাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এ জেলার অভিভাবকরা। যেখানে জাতী সংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ চলতি তাপপ্রবাহে বাংলাদেশের শিশুদের  অতি উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। সেখানে স্কুলগুলো চলমান তাপপ্রবাহ পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য সরকারের অনুরোধ জানিয়েছে এ জেলার অভিভাবকরা।

জেলাবাসীকে নিম্নোক্ত নির্দেশনা পালনে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে-

  • বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া প্রখর রোদে বাইরে বের না হওয়া। আর ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
  • পানি শূন্যতা পরিহার করতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
  • সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা ও বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
  • ভাজা পোড়া খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
  • ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর বার বার মুছতে হবে।
  • শ্বাসকষ্টের রোগী ও শিশুদের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ/মৎস্য/ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
  • বাস শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমিকরা যেন বেশিক্ষণ তীব্র রোদে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *