:: গাজীপুর প্রতিনিধি ::
গাজীপুরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাসায় ঢুকে রাবেয়া আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় বাধা দিলে রাবেয়ার মা ও ছোট বোনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। রাবেয়া গাজীপুর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফের মেয়ে।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ সালনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত রাবেয়াকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গুরুতর আহত রাবেয়ার মা বিলকিস বেগম (৪৫) এবং ছোট বোন খাদিজাকে (১৪) উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তারা রাজধানী উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম (২৫) ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মহেশতারা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। সে তার বাবা-মার সঙ্গে দক্ষিণ সালনা এলাকায় থাকত।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ওসি জিয়াউল হক জানান, দক্ষিণ সালনা এলাকার আবদুর রউফ তার স্ত্রী চার মেয়ে রাবেয়া আক্তার (২১), হাবিবা (১৮), খাদিজা (১৫), জান্নাত (১৩) ও এক ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি সালনা বাজারে আরএফএল প্লাস্টিক শো রুমে চাকরি করেন। তার বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তার ২০২০ সালে জয়দেবপুর সরকারী মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সে স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিসাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম প্রসেসিং করতে থাকে। তার ছোট দুই বোন খাদিজা ও জান্নাতকে কোরআন শিক্ষার জন্য মো. সাইদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আব্দুর রউফের ছোট দুই মেয়েকে পড়ানোর জন্য বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তারের দিকে কুনজর পড়ে সাইদুল ইসলামের। কিছুদিন পরে সে রাবেয়া আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাবেয়ার পরিবার সরাসরি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এতে সাইদুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়। তাকে বাসায় এসে পড়াতে নিষেধ করা হয়। এতে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়াকে কলেজে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করত এবং প্রাণনাশের হুমকি দিত।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে সাইদুল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাবেয়া আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তার কক্ষে ঢুকে ছুরি দিয়ে রাবেয়ার মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রাবেয়ার চিৎকারে তার মা, ছোট বোন হাবিবা ও খাদিজা দৌড়ে রাবেয়ার কক্ষে গিয়ে দেখে সাইদুল ইসলাম ছুরি দিয়ে রাবেয়াকে এলোপাতাড়িভাবে কোপাচ্ছে। তারা রাবেয়াকে রক্ষা করতে গেলে মা বিলকিস বেগম ও ছোট বোন খাদিজাকেও কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায় সাইদুল ইসলাম। পরে চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাবেয়া আক্তার ওই হাসপাতালে মারা যায়। গুরুতর আহত মা ছোট বোনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সাইদুল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসায় প্রবেশ করে রাবেয়াকে ছুরি দিয়ে মাথা, গলা, হাত ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। তাঁর চিৎকারে মা ও দুই বোন দৌড়ে রাবেয়া আক্তারের ঘরে গিয়ে দেখেন, সাইদুল ছুরি দিয়ে তখনো রাবেয়াকে ছুরিকাঘাত করছেন। এ সময় বাধা দিলে ছুরি দিয়ে তিনি অন্যদেরও আঘাত করে পালিয়ে যান সাইদুল।
রাবেয়ার বাবা আবদুর রউফ বলেন, ‘সাইদুল আমাদের গৃহশিক্ষক ছিল। ছোট দুই মেয়েকে সে কোরআন পড়াত। সে আমার বড় মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে আমরা সরাসরি না করে দিই। যার কারণেই সে বাড়িতে ঢুকে আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।’
গুরুতর অবস্থায় রাবেয়াকে স্থানীয় ব্যক্তিরা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রাবেয়ার মা। আহত হয়েছে রাবেয়ার ছোট তিন বোন।
রাবেয়াদের প্রতিবেশী মাহমুদুল হক বলেন, ‘গত সোমবার রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে তাঁদের ঘরের দিকে গেলে দেখতে পাই শিক্ষক সাইদুল দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। পরে রাবেয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
এ ঘটনায় রক্তাক্ত ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাজীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকালে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তাক্ত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। আসামি সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।