:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ করা হবে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস তাদের মুক্তি না দেবে ততক্ষণ কোনো বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করা হবে না, পানির লাইন বন্ধ থাকবে, জ্বালানি ট্রাক ঢুকবে না।
৭ অক্টোবর হামলার প্রথম প্রহরে ইসরায়েলের দক্ষিণের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে অন্তত ১৫০ জনকে ধরে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। হামাসের পাশাপাশি উপত্যকাটির আরেক সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদও অন্তত ৩০ ইসরায়েলি নাগরিককে জিম্মি করেছে বলে জানা গেছে।
বন্দিদের মধ্যে অন্তত ১৭ জন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিক রয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের টানেলে রাখা হয়েছে। গাজায় হামাসের টানেলের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে।
হামাসের আল-কাসেম ব্রিগেডস বুধবার (১১ অক্টোবর) এক ইসরায়েলি নারী ও তার দুই সন্তানকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল এই দাবি ভুয়া বলে মন্তব্য করেছে।
হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দি বিনিময় করতে চায়। ইসরায়েলের কারাগারে অন্তত ৫ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন নারী। ১৭০ জন শিশু।
কাতার বন্দি বিনিময়ে দূতিয়ালি করার চষ্টা করছে। তুরস্কও বন্দিদের মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।
গত ৭ অক্টোবর সকালে হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালালে প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। এরপর নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলও। দুই পক্ষই ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ায়।
এরই মধ্যে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে। গাজায় পানি, খাবার, জ্বালানি, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা এক হাজার ৩০০ ছাড়িয়য়েছে। আর গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন এক হাজার ২০০-এর বেশি।
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও অবরোধের মুখে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে গাজাবাসী। গতকাল বুধবার গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এর অর্থ গাজাবাসীকে এখন শুধু জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, আজ উপত্যকাটির হাসপাতালগুলোর জেনারেটরগুলোর জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে।
গত ১০ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় সব ধরনের খাবার, জ্বালানি, ওষুধসহ অন্যান্য পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা এবং জলসীমায় অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বল্প সময়ের নোটিশে দেশের ৩ লাখ রিজার্ভ সৈন্যকে সক্রিয় ডিউটিতে ডেকে পাঠিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত গাজা অবরোধের নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন গাজার সব বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিতে। খাদ্য, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ যেন গাজায় প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েলের এমন ঘোষণার পর গাজার নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব জ্যান এগেলন্ড বলেছেন, ইসরায়েলের এমন উদ্যোগের ফলে গাজাবাসীর জীবনে আক্ষরিক অর্থেই ‘নরক’ নেমে আসবে। তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে এভাবে সবাইকে শাস্তি দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইসরায়েলের পাশে থাকবে‘
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল পৌঁছেছেন। আঞ্চলিক দেশগুলোকে সংঘাতের এই পরিস্থিতির ‘সুবিধা না নিতে’ সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেছেন, ’নিজেকে (ইসরায়েল) রক্ষার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু যত দিন আমেরিকা আছে তত দিন এর প্রয়োজন নেই।‘
তিনি আরও বলেন, ’ইসরায়েল কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবে সেটি ‘ম্যাটার’ এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এক ঝটিকা সফরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসরায়েলে পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর ব্লিঙ্কেনই বিদেশি প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে ইসরায়েল সফর করলেন।
হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোলাবারুদের প্রথম চালান ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের পক্ষে নিজেদের দৃঢ় সহঅবস্থানের জানান দিতেই ব্লিঙ্কেন যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েল সফর করলেন। ইরানসহ অঞ্চলটির অন্য শক্তিগুলোকে চলমান সংঘাতে না জড়ানোর হুঁশিয়ারি জানানো তার সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য। তা ছাড়া হামাসের হাতে বন্দি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মুক্তি ও গাজায় অবস্থানরত নিজেদের নাগরিকদের নিরাপদে ফেরাতেও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করবেন। ইসরায়েল থেকে তিনি প্রতিবেশী দেশ জর্দানে যাবেন। সেখানে তিনি জর্দানের রাজা আব্দুল্লাহ ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও দেখা করবেন বলে শোনা গেছে। তবে চলমান যুদ্ধে হামাসের ওপর আব্বাসের কোনো প্রভাব নেই।