:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
আগামীকাল রোববার বিএনপি সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। শনিবার দ্বিতীয় দফায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ হরতালের কথা জানায়।
বিএনপি মিডিয়া সেলের প্রধান জহিরউদ্দিন স্বপন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রথমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কথা জানানো হয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগমুহূর্তে ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের এ ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে আওয়ামী পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।’ তবে পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে বিএনপির পক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, সারা দেশে নয়, আগামীকালের হরতাল শুধু ঢাকায়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সারা দেশে হরতালের কথা জানানো হলো।
বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হন। একপর্যায়ে কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ব্যাপকভাবে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কাকরাইল মোড়ে একটি পুলিশ বক্স ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
কাকরাইলের পর বেলা দুইটার দিকে শান্তিনগর মোড় ও বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায়ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও প্রায় ২০০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
জামায়াতও হরতাল রোববার হরতাল ডেকেছে
রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর শাপলা চত্বরে জামায়াত ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বানচাল করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। মিটিং-মিছিল করা যেকোনো রাজনৈতিক দলের সংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার।
‘জামায়াতের মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের বাস, লঞ্চ ও ট্রেন থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি, অগণতান্ত্রিক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। আমি জালিম সরকারের এই অন্যায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপির মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলা, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার এবং জামায়াত ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে পুলিশের বাধাদান ও মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামীকাল ২৯ অক্টোবর রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। হরতালের এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য আমি সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি এবং দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
বিএনপির হরতালে গণঅধিকার পরিষদের সমর্থন
রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আগামীকাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। হামলার প্রতিবাদে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন। বিএনপির ডাকা এই হরতালে সমর্থন জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। একই সঙ্গে হামলার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে দলটি।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন।
পরে যৌথ বিবৃতিতে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যেভাবে বিরোধী দলের নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ও লগি-বৈঠা নিয়ে হামলা করেছে ও সমাবেশ পণ্ড করেছে তা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। এমন দৃষ্টান্ত কেবল ফিলিস্তিনে দেখা যায়। সেখানেও নিরীহ জনগণের ওপর ইসরায়েল এভাবে বর্বরতা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের জনগণ যেভাবে ইসরায়েলকে রুখে দিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণও সেভাবে আওয়ামী লীগকে রুখে দেবে।’
তারা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার পেটুয়া বাহিনী যতই স্বপ্ন দেখুক যে, তাদের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, বাংলাদেশের জনগণ তা পূরণ হতে দেবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে এবং বিরোধী দলগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটারবিহীন এই সরকারকে তাড়াবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং কোনো হামলা-মামলায় ভয় পাই না। শান্তিপূর্ণভাবেই আমাদের দাবি আদায় করব।’