:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ষষ্ঠ দফার চলমান অবরোধ শেষে দুই দিন বিরতি দিয়ে আগামী রোববার ও সোমবার (২৬ ও ২৭ নভেম্বর) সড়ক, নৌ ও রেলপথে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনপ্রতিষ্ঠা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসা এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং অবৈধ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আগামী ২৬ নভেম্বর রোববার ভোর ৬টা থেকে ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে রিজভী বলেন, এক বিশেষ পরিস্থিতি ও দুর্যোগ দুর্বিপাকের মধ্যে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছেন না। আর সরকার প্রতিনিয়ত ধাপ্পাবাজি করছে জনগণের সঙ্গে। সরকার প্রধান বলেছেন, ‘নির্বাচনে আসুন কার কত দৌড় আমরা দেখি’। নির্বাচনে দৌড়াবেন তো আপনি, আপনার মনের মতো করে তৈরি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন তাদেরকে নিয়ে আপনি দৌড়াবেন। জনগণ তো প্রতিযোগিতার জন্য দৌড়াতে পারবে না। কারণ জনগণকে আপনি বন্দি করে রেখেছেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রকামী মানুষ আজ বন্দি জীবন যাপন করছে। বিএনপির অধিকাংশ নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কারাগারে দিয়েছেন। আমাদের দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলে ঢুকিয়েছেন। মাঠ খালি করে একা দৌড়ানোর জন্য আপনি রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করেছেন। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, আন্ডারগ্রাউন্ড দল নই। আমরা রাস্তায় প্রতিবাদ করি সকল অন্যায়ের। আর এই অপরাধেই আপনি গ্রেফতার করছেন । গ্রেফতারের জন্য মহাউৎসব শুরু করেছেন আপনি। প্রাণভরে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছেন আপনি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচন, দুর্নীতি এবং টাকা পাচার করতে আপনি এবং আপনার সরকার পছন্দ করেন। একতরফা নির্বাচনী দৌড় আপনি দেবেন। তবে বলে রাখছি, এটা বাংলাদেশ। দেশের অসংখ্য মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ গঠিত হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আপনি কিছু কিছু দেশকে সব উজাড় করে দিয়েছেন।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের পরদিন দলটি সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি দেয় তারা। এরপর শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধ পালন করে বিএনপি।
তারপর ৭ নভেম্বর একদিনের বিরতি দিয়ে ৮ ও ৯ নভেম্বর অবরোধ দেওয়া হয়। পরে শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে আবার চতুর্থ অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। ১৪ নভেম্বর চতুর্থ দফা শেষে ১৫ নভেম্বর থেকে পঞ্চম দফায় অবরোধ পালনের ঘোষণা দেয় দলটি। রোব ও সোমবার (১৯ ও ২০ নভেম্বর) হরতাল কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এরপর ষষ্ট দফায় বুধবার ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা (২২ ও ২৩ নভেম্বর) দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি।
অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কর্নেল (অব.) অলি
বিএনপির সমর্থনে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর (রোব ও সোমবার) ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির ডাকা এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করার জন্য আহ্বান জানান অলি আহমদ।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, মেহেরবানি করে আপনারা অবরোধ পালন করুন। সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করুন। ভয় পেলে চলবে না। মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হল, তার আত্মসম্মান। সেই সম্মান হারিয়ে কি হবে, একবার ভেবে দেখুন। আপনাদের নীরবতা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। নিজের নাগরিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার হোন। অন্যথায় কেউ এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার পথ পাবেন না।
অবরোধের ঘোষণা জামায়াতের
টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের পর ফের ‘৪৮ ঘণ্টা অবরোধ’ ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম।
এটিএম মা’ছুম বলেন, একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দি ও নেতাকর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে আমি জামায়াতের পক্ষ থেকে আগামী রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে টানা ৪৮ ঘন্টা শান্তিপূর্ণ সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছি।