:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নরসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, স্বাস্থ্যগত কারণে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংক পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। তবে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পদ্মা ব্যাংক আগে ফারমার্স ব্যাংক নামে পরিচিত ছিল।
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সরাফতের আগে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দীন খান আলমগীর বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর বেসরকারি খাতের সাবেক ফারমার্স (বর্তমানে পদ্মা) ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এরপরই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটির নাম পাল্টানো হয়।
২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে দ্য ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। এরপর ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। বলা হয়, কোম্পানিটির ৭০ কোটি ডলার (৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ আনতে ব্যাংক মধ্যস্থতা করবে। ২ সেপ্টেম্বর ডেল মরগানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে পদ্মা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ডেল মরগানের চেয়ারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন।
এই বিনিয়োগ আনার স্বার্থে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটিকে বেশ কিছু নীতি ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ৯০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানে থাকা ব্যাংকটিকে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে এ লোকসান না দেখানোর সুযোগও দেওয়া হয়। লোকসানের বিপরীতে ‘ইনট্যানজিবল অ্যাসেট বা অদৃশ্য সম্পদ’ সৃষ্টি করার সুযোগ পায় পদ্মা ব্যাংক, যা পরের ১০ বছরের মুনাফা থেকে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া লোকসান সমন্বয়ের সময়সীমা পর্যন্ত ১০ বছর ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই বিনিয়োগ আর আসেনি।
এর আগেও ব্যাংকটিকে বেশ কিছু নীতি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। নগদ সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকয়ারমেন্ট) ও বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআরের (স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও) অর্থ জমা রাখার বাধ্যবাধকতায় ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মওকুফ করা হয় দণ্ড-সুদ ও জরিমানা।
বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফলে ঋণ থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ব্যাংকটি বড় অর্থের লোকসান গুনছে বলে জানা গেছে। এখন সরকারি খাতের ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর ও নতুন ঋণ দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোতেই সমাধান খুঁজছে ব্যাংকটি।