:: কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি ::
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
গ্রেফতার হওয়ার সাড়ে তিন মাস পর জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য। বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেলা ৩.৪৫ মিনিটে মুক্তি পান এই দুই নেতা।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চার মাস ৫ দিন পর শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি মুক্তি পান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান নাগরিক নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বিকাল পৌনে চারটার দিকে মহাসচিব ফখরুল ও আমির খসরু কারাগারের মূল ফটক থেকে বেরিয়ে যান।
খসরুর মুক্তির খবর পেয়ে আগে থেকেই কারাফটকে অবস্থান করছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তিনি বেরিয়ে এলে নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
আমির খসরু কারাগার থেকে বেরিয়ে একটি কালো পাজেরো গাড়িতে করে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তিনি ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। নেতাকর্মীরা এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে গোলাপের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দেন।
এ সময় আমির খসরুর সঙ্গে ছিলেন ছেলে ইসরাফিল।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি ও খসরুর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়েছিল। সবগুলো মামলায় তারা জামিন পেয়েছেন। সবশেষ গতকাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও নাশকতার মামলায় জামিনের মাধ্যমে কারামুক্ত হলেন তারা।
বুধবার পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের বিএনপির এই দুই নেতার জামিন মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে, গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছরের ২৫ মে ধানমন্ডি থানায় বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল একইসঙ্গে লক্ষ্মীপুরে ২টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা বলেছিল।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরুর আগেই কাকরাইলে দুপুর থেকে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ পরে বিজয়নগর পানির ট্যাংক ও শান্তিনগর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এই সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য, একজন সাংবাদিক ও যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা নিহত হন। আহত হন পুলিশের ৪১ ও আনসারের ২৫ সদস্য। এ ছাড়া কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক আহত হন।
এ ঘটনায় ২ নভেম্বর রাত ১টার দিকে গুলশানের একটি বাসা থেকে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আটক করে ডিবি। পরদিন ৩ নভেম্বর সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলায় তার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ৯ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
একই ঘটনায় মির্জা ফখরুলের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। সব মামলায় আদালত থেকে তিনি জামিন পান। কারাগারে জামিননামা পৌঁছানোর পর আজ বিকেলে তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন।
এর আগে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ নাগরিক নিউজকে জানিয়েছিলেন, অন্য সব মামলায় আগেই জামিন হয়েছে। এখন বিএনপি মহাসচিবের মুক্তি পেতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। আসামিদের অসুস্থতা, বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে জামিনের প্রার্থনা করেন তারা। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।