:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিদের মুক্তির জন্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে হামাস। তবে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে হামলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে অনিশ্চিত হয়ে গেল যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব।
মঙ্গলবার (৭ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস সোমবার মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা গাজা যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল বলেছে, এই প্রস্তাবের শর্তগুলো তাদের দাবি পূরণ করেনি এবং চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি রাফাহতে হামলার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
এর আগে সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত রাফাহতে আকাশ ও স্থল থেকে আক্রমণ চালায় এবং শহরের কিছু অংশ থেকে বাসিন্দাদের ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মূলত গাজার এই শহরটি এখন ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির আশ্রয়স্থল।
হামাস এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলে প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়াহ কাতারি এবং মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন।
অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটিতে ইসরায়েলের দাবি পূরণ হয়নি। তবে ইসরায়েল একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে আলোচকদের সাথে দেখা করার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি দল ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু করতে মঙ্গলবার মিশর যাবে।
বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও বলেছে, তার (নেতানিয়াহুর) যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা রাফাহতে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্স-এ বলেছেন, নেতানিয়াহু রাফাহতে বোমা হামলা করে যুদ্ধবিরতিকে বিঘ্নিত করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে তা মিসরীয় প্রস্তাবের চেয়ে খুবই দুর্বল এবং এতে এমন কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা ইসরায়েল গ্রহণ করতে পারে না।
ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী পক্ষ হিসেবে দেখানোর উদ্দেশ্যে এই প্রস্তাবটি একটি চালাকি বলে মনে হচ্ছে।’
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ওয়াশিংটন তার মিত্রদের সাথে হামাসের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা করবে এবং এই পর্যায়ে এই ধরনের একটি চুক্তি ‘একেবারেই অর্জনযোগ্য’।
এদিকে রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় একজন নারী ও এক মেয়েসহ পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ইসরায়েল বিশ্বাস করে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হামাস যোদ্ধা এবং সম্ভাব্য কয়েক ডজন বন্দিকে রাফাহতে আটক রাখা হয়েছে।
একইসঙ্গে ইসরায়েলের দাবি, গাজায় বিজয়ের জন্য প্রধান এই শহরটিতে অভিযান চালানো দরকার।
এর আগে সোমবার (৬ মে) যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি এবং মিশরীয় গোয়েন্দামন্ত্রী আব্বাস কামেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং তাদেরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মতির ব্যাপারে অবহিত করেছেন।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বল’ এখন ইসরায়েলের কোর্টে। প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এখন তাদের ওপরই নির্ভর করছে। তবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে হামাস যতটা আগ্রহী ঠিক ততটা আগ্রহ ইসরায়েলের নেই বলে সম্প্রতি পরিষ্কার করেছে দেশটির সরকার। উল্টো তারা দক্ষিণ গাজার রাফায় আক্রমণ জোরদারের কথা জানিয়েছে।
হামাসের প্রস্তাবে স্বভাবতই গাজাবাসীর মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। তবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি। বরং দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম বলছে, এই প্রস্তাবে গ্রহণ করবে না ইসরায়েল। নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে চ্যানেল থার্টিন বলছেন, মিশরের এমন প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করেছে যা এরই মধ্যে ভেস্তে গেছে।
এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হামাস সেই সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যা জিম্মিদের পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করবে এবং তাই আমাদের রাফাতে অভিযান শুরু করতে হবে।
যে চুক্তিতে হামাস সম্মত হয়েছে সে বিষয়ে আলজাজিরাকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
গাজায় গত প্রায় সাত মাস ধরে সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সারা বিশ্ব আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানালেও তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না দেশটির সরকার। সংঘাতের প্রথম দিকে গত বছরের নভেম্বর মাসে মাত্র সাতদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। সেই সময় যুদ্ধবিরতির সুযোগে উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময়ও করেছিল।
এরপর ফের যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হলেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আপত্তিতে তাতে অচলাবস্থা তৈরি হয়। চলতি সপ্তাহে মিশরের রাজধানী কায়রোতে যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে অবশিষ্ট ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি নিশ্চিতে জোর আলোচনা শুরু হয়। তবে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজা যুদ্ধ অবসানের জন্য হামাসের দাবি কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটিকে ক্ষমতায় রাখবে। আর তারা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।’
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলেছে, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে প্রায় সাত মাসের যুদ্ধে ফিলিস্তিনে কমপক্ষে ৩৪,৫৩৫ জন নিহত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৪৭ জন নিহত হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে ৩৪,৫৩৫ জনে দাঁড়ালো।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মধ্যদিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মোট ৭৭,৭০৪ জন আহত হয়েছে।