অবন্তিকার আত্মহত্যা: জামিন পাননি সহপাঠী আম্মান

:: আদালত প্রতিবেদক ::

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তার মা তাহমিনা শবনমের করা মামলায় সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান ওরফে আম্মান সিদ্দিকীর জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত।

রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আম্মানের পক্ষে তার আইনজীবী মো. আবু তাহের জামিন আবেদন করলে বিচারক মো. আবু বকর সিদ্দিক তা নাকচ করে দেন

দুই দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (২০ মার্চ) আম্মানকে একই আদালতে হাজির করার পর জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত জামিন নাকচ না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নুর উর রহমান বলেন, অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়টি একটি স্পর্শকাতর মামলা। মামলার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আম্মান এ মামলার প্রধান আসামি। সে জামিনে বের হলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত করার চেষ্টাসহ মামলার সাক্ষীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা আদালতকে বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। আদালত তা বিবেচনায় নিয়ে আসামির জামিন না নাকচ করেন।

তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. আবু তাহের বলেন, আম্মান এখনও তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়নি। জামিন পাওয়া তার অধিকার। সে (আম্মান) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জামিন পেলে সে কোথাও পালিয়ে যাবে না। আমরা বিধি মোতাবেক আবারও তার জামিন চাইব। 

কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাও এলাকার অরণি নামের ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। আত্মহত্যার আগে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর মৃত্যুর জন্য সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মানকে দায়ী করেন। এরপর দায়ীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতেই জবি প্রশাসন অবন্তিকার সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরদিন তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপি।

ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকাকে আপত্তিকর মন্তব্য করায়, মেয়েটি প্রতিবাদে হিসেবে আম্মানোকে চড় লাগাবে বলে। আম্মান নিজের অপরাধ ঢাকতে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে বলে অবন্তিকা তাকে চড় মারার কথা বলেছে। এবং এই এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্বীন ইসলাম মেয়েটিকে ভিন্ন ভিন্ন সময় ৭ বার তার অফিসে তলব করে। এবং এ ধরনের মন্তব্য করে তাঁকে শাসায়, “খা**কি তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?” ঠিক এভাবেই অবন্তিকা তাঁর সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন।

উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তায় জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত কনসার্টে উপস্থাপনা করেছিলেন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। কনসার্টে উপস্থিত হাজারো শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বার্তা দেন তিনি। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন।

গত ১৫ মার্চ  শুক্রবার রাতে কুমিল্লা শহরে বাড়িতে আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন অবন্তিকা। তাতে সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে সহকারী একজন প্রক্টরের বিরুদ্ধে ছেলেটির পক্ষ নিয়ে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেছেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন অবন্তিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার বন্ধু ও সহপাঠীরা বলেছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অবন্তিকা উপস্থাপনা করতেন হাসিমুখে।

ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা এলাকার মরহুম অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল তাঁর বাবা মৃত্যুবরণ করেন। অধ্যাপক জামাল উদ্দিন কুমিল্লা সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। অবন্তিকার আত্মহত্যার পর শুক্রবার রাতে তাঁর মা বাদী হয়ে আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আসামি করে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুজনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *