■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ইতিহাসে প্রথমবার একসঙ্গে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান—ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। এই রূপান্তরের আগে প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক বসানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারা কোন ব্যাংকে প্রশাসক হবেন, সেটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিষ্কার হতে পারে।
নির্বাচিত প্রশাসকদের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব পাচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক মো. শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব পাচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক হচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন। ইউনিয়ন ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে টাঁকশালের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামানকে প্রশাসক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসকের পাশাপাশি আরও একজন অতিরিক্ত পরিচালক, একজন যুগ্ম পরিচালক ও একজন উপপরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক টিম দায়িত্ব নেবে।
আইনি জটিলতা এড়াতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা প্রায় শেষ হয়েছে। তাঁদের লিখিত মতামত পেলেই প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের সভায় যুক্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরেই প্রশাসকেরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’
পাঁচ ব্যাংকের এ অবস্থায় পৌঁছানোর পেছনে দীর্ঘ অনিয়ম ও দুর্নীতির ইতিহাস রয়েছে। এসব ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়। ফলে ব্যাংকগুলো ভয়াবহ খেলাপির ফাঁদে আটকে পড়ে।
বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর ৭৬ শতাংশই খেলাপি। ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৭, গ্লোবালে ৯৫, সোশ্যাল ইসলামীতে ৬২ দশমিক ৩ এবং এক্সিমে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, এ জন্য প্রয়োজন ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার ২০০ কোটি, আমানত বিমা ট্রাস্ট থেকে আসবে সাড়ে ৭ হাজার এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দেবে আরও সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার। সরকারের সম্মতিও মিলেছে ইতিমধ্যে।
কিছুদিন আগে একীভূত করতে ব্যাংক পাঁচটির শুনানি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকগুলোর প্রস্তাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তা পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়।
জানা গেছে, এই পাঁচ ব্যাংকের ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারই দিচ্ছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে।
এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটি (ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একমাত্র এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।