:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিতর্কিত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমানের কাছে ই-মেইলে তাঁর এই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাচ্ছেন না গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাও যাচ্ছেন না অথবা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে গভর্নর তাঁর এক পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কাছে পাঠান। সেখানে তিনি পদত্যাগের জন্য ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন। তবে এ বিষয়ে সচিব আবদুর রহমান খান কোনো মন্তব্য করেননি। পরে এ বিষয়ে আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে গত বুধবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়েছে। ওইদিন একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন।
গত বুধবার (৭ আগস্ট) নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ওইদিন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর। তারা হলেন– কাজী ছাইদুর রহমান, খুরশীদ আলম, হাবিবুর রহমান এবং নুরুন নাহার। এর মধ্যে কাজী সাইদুর রহমান ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এবং নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক খাতের ভঙ্গুরতার কারণে দেশে অর্থনীতির আজকের এই খারাপ অবস্থা তৈরি হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ কষ্টে আছে। এখন শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্র সংস্কারের দাবির সঙ্গে তারা সহমত পোষণ করে অবিলম্বে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
তারা দাবি করেন, গভর্নরসহ বিভিন্ন অনিয়মে দায়ী এসব কর্মকর্তা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া যেসব নির্বাহী পরিচালক অনিয়মে সহায়তা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের নিয়ে একটি গ্রেডিং সূচক প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ওই সূচকে পেয়েছেন ‘ডি গ্রেড’। বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিন। একই সঙ্গে বহিস্থ খাতের অনিশ্চয়তা ও চাপের মুখে অর্থনীতি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে তিনি যোগ দেন ওই বছরের ১২ জুলাই। তিনি ফজলে কবিরের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দেশের ১২তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে ছিলেন অর্থসচিব। শেখ হাসিনার সরকারে নীতিনির্ধারণে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন হলো তালুকদার। গভর্নর হওয়ার আগে অর্থসচিব থাকা কালেই তিনি নানা নীতি প্রণয়ন, এস আলম বেক্সিমকো, আবুল খায়ের, নাসাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সুবিধা দিয়েছেন।
ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থতা, ডলার-সংকটসহ নানা কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে রয়েছে। চলতি বছর গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একীভূতকরণের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকগুলোর অনিয়ম রোধে কিছু পদক্ষেপ নিলেও কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে আবার তিনি বেশ নমনীয়। যেমন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনিয়ম রোধে তিনি ছিলেন নিষ্ক্রিয়। উল্টো অনৈতিক ও নীতি ভঙ্গ করে নানা সুযোগ সুবিধা দেয়। এসব বিষয়ে যেন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না হয় এজন্য সাংবাদিক প্রবেশে দেয় নিষেধাজ্ঞা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে করে লুকোচুরি।