বাংলাদেশ ব্যাংকের লাল, হলুদ ও সবুজ ব্যাংকের তালিকা 

:: নাগরিক প্রতিবেদক ::

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলোকে নিয়ে লাল, হলুদ ও সবুজের ধারণাভিত্তিক তালিকা করেছে। এ তালিকার ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চলতি সপ্তাহের দেশের ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে লাল তালিকায় দুর্বল ব্যাংক, হলুদ তালিকায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংক ও সবুজ তালিকায় দেখানো হয় ভালো ব্যাংকগুলোকে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, যে তালিকা নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে, সেটি ধারণাভিত্তিক তালিকা। এই তালিকার ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। এটা ব্যাংকের স্বাস্থ্য দেখার কোনো সঠিক পদ্ধতি নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ নানা সময়ে ব্যাংকের তালিকা করে থাকে। এসব তালিকায় কোন পরিস্থিতি হলে কী হতে পারে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়। ব্যাংকের স্বাস্থ্য যাচাই করে দেখার একমাত্র উপাদান নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন। ফলে অন্য কোনো তালিকা বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই।

মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে নানা ধরনের অনুমানভিত্তিক কথা হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একীভূত হোক না কেন, আমানতকারীদের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও বিবেচনায় নেওয়া হবে। ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করে তৈরি করা হবে নীতিমালা। তার ভিত্তিতেই কাজটি করা হবে। যেসব ব্যাংক একীভূত হবে, তার আগে ভালো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত পরিস্থিতি যাচাই-বাছাইয়ের পর যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি করা হবে। একীভূত হওয়ার পর ভালো ব্যাংক যাতে দুর্বল না হয় আর দুর্বল ব্যাংক যাতে ভালো হয়—এ দুটি বিষয়ই দেখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকসহ নয়টি ব্যাংক রেড জোনে আছে, যা তাদের ভঙ্গুর আর্থিক দশাকে সামনে এনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক এবং গ্রিন জোনে আছে ১৬টি ব্যাংক।

গ্রিন জোন সূচকের দিক থেকে ভাল পারফরমেন্সকে বোঝায় এবং ইয়োলো জোন মধ্যবর্তী অবস্থানকে বোঝায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগ অর্ধবার্ষিক পারফরেমেন্সের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত পর্যালোচনা চলাকালীন সময়ে ৩৮টি ব্যাংকের অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং ১৬টি ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এমন এক সময়ে এই প্রতিবেদন সামনে এসেছে যখন দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ নিয়ে আলোচনা চলছে।

রেড জোনে যেসব ব্যাংক

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

ইয়েলো জোনে যেসব ব্যাংক

ইয়েলো জোনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকসহ ১৯টি বেসরকারি ব্যাংক এবং আটটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক আছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো- আইএফআইসি, মেঘনা, ওয়ান, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ডাচ-বাংলা, প্রিমিয়ার, ব্র্যাক, সাউথইস্ট, সিটি, ট্রাস্ট, এসবিএসি, মধুমতি, ঢাকা, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংক।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, আল আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিয়ন, এক্সিম ও গ্লোবাল ইসলামী।

গ্রিন জোনে যেসব ব্যাংক

গ্রিন জোনে আছে ১৬টি ব্যাংক, গ্রিন জোন মূলত ভালো আর্থিক অবস্থাকে বোঝায়। 

গ্রিন জোনে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- প্রাইম, ইস্টার্ন, হাবিব, এনসিসি, মিডল্যান্ড, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত , যমুনা, শাহজালাল ইসলামী, উরি, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই বিশ্লেষণ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের ডেটা সেট অন্যদের থেকে আলাদা। অন্যদিকে তথ্য-উপাত্তের অভাবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

৪ মার্চ ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে।

এদিকে, ৪ মার্চ বিএবির সঙ্গে গভর্নরের বৈঠকে আরও জানানো হয়, দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ (ঋণ) কিনে নেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি)। ফলে একীভূত হওয়ার কারণে ভালো ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালকেরা ভালো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।  

দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার আলোচনাটি সামনে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ (পিসিএ) শীর্ষক নীতিমালা প্রকাশের পর।

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর শ্রেণি নির্ধারণ করা হবে। সূচক পাঁচটি হলো ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত, টিয়ার-১ মূলধন অনুপাত, কমন ইক্যুইটি টিয়ার-১ (সিইটি১) অনুপাত, প্রকৃত খেলাপি ঋণ ও করপোরেট গভর্ন্যান্স বা সুশাসন। এ পাঁচ সূচকে লাগাতার পতন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ‘অনিরাপদ’ ও ‘আর্থিকভাবে অস্বাস্থ্যকর বা দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ ছাড়া দুই সূচকে অবনতি হলে সবচেয়ে ‘দুর্বল’ ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এরপর দুর্বল ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের মানোন্নয়নে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংককে একীভূত করার পদক্ষেপ নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চ থেকে এই পিসিএ নীতিমালা কার্যকর করা হবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *