:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দেশে চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১ জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। শনিবার (২৪ আগস্ট) সচিবালয়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সচিব বলেন, এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের ৫ জন, কুমিল্লার ৪ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, সবশেষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১১টি জেলার ৭৭টি উপজেলা। জেলাগুলো হলো- ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর এবং কক্সবাজার।
কে এম আলী রেজা বলেন, ১১টি জেলায় মোট ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৯ জন। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন মানুষ।
এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। বিভিন্ন নদ নদীর পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও জানান তিনি।
সচিব বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা নগদ এবং ২০ হাজার ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫ হাজার বস্তা শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ছাড়া শিশুখাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা এবং পশুখাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য ৭৭০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
সচিব আরও বলেন, ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি ভি–স্যাট চালু করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে পানিবাহিত রোগবালাই বাড়ে, এদিককার প্রস্তুতি জানতে চাইলে সচিব বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে প্রস্তুতি রয়েছে।
আশপাশের জেলা থেকে যথেষ্ট বোট আনা হয়েছে। গোমতী, হালদা, মুহরী নদীর পানির পরিস্থিতির আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি হবে বলেও জানান সচিব।
রাত ১০টায় খুলে দেওয়া হবে কাপ্তাই বাঁধের ১৬ জলকপাট
কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় শনিবার রাত ১০টায় কর্ণফুলি জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৬টি স্পিলওয়ের গেট খুলে দেওয়া হবে। এজন্য ভাটি অঞ্চলকে জরুরি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি পরিমাপ ১০৭.৬৩ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। যেখানে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক ও কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন খান জানান, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৬টি জলকপাটে ৬ ইঞ্চি করে রাত ১০ টার দিকে কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া হবে। গত কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা বা বিপদসীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ১০৮ এমএসএল পর্যন্ত বিপদসীমার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং এই পরিমাপে পৌঁছালে ছাড়া হতে পারে কাপ্তাই বাঁধের পানি।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রে দৈনিক ৫টি ইউনিটে সর্বোচ্চ ২১৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর ফলে হ্রদ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে হ্রদের নিম্নাঞ্চলের অনেকের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া। দ্রুত সময়ে যদি কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করা না হয়, তবে কাপ্তাই হ্রদসংলগ্ন অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
কাপ্তাই বাঁধ বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত ও চট্টগ্রাম থেকে ৬৫ কিলোমিটার উজানে কর্ণফুলি নদীর উপর নির্মিত একটি বাঁধ। কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত এটির একটি কৃত্রিম জলাধার রয়েছে যার পানি ধারণক্ষমতা ৫২,৫১,০০০ একর (২১,২৫,০০০ হেক্টর)। বাঁধ ও হ্রদটি নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১৯৬২ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বাঁধের সঞ্চিত পানি ব্যবহার করে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ১৯৬২ ও ১৯৮৮ সালের মধ্যে এখানে সর্বমোট ২৩০ মেগাওয়াট (৩,১০,০০০ অশ্বশক্তি) বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর বসানো হয়। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বাঁধ ও একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এ ছাড়া এখানে ‘কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সোলার পিডি গ্রিড কানেকটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নামে দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়। পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে বাঁধের পাশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এই সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান।
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতন দিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা
চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠন করা হয়েছে ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ’ তহবিল। সেই তহবিলেই এবার নিজেদের একদিনের মূল বেতন দিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ) এর অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ।
বিষয়টি একটি বিবৃতি দিয়ে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল এলাকার বন্যা পীড়িত মানুষদের সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ) ও এর অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীগণের ০১(এক) দিনের মূল বেতন ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ’ -এ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
শুক্রবার দেশের চলমান বন্যা মোকাবেলায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অর্থ পাঠানোর জন্য সোনালী ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা প্রদানে আগ্রহীরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের নিম্নোক্ত অ্যাকাউন্টে সহায়তার অর্থ পাঠাতে পারেন। হিসাবের নাম : প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হিসাব নম্বর-০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩। এ তহবিলের অর্থ ত্রাণ ও কল্যাণ কাজে ব্যয় করা হয়। প্রেরিত অর্থ সরকার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করে এর যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করবে।
ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচলে ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশ
ফেনী জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে মোবাইল অপারেটরদের জেনারেটরগুলোর ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) তিনি এ নির্দেশনা দেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফেনী জেলার ৭৮টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে প্রচুর ডিজেলের প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলো সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় পোর্টেবল জেনারেটরে (পিজি) (৭৫ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ২ দশমিক ৩ লিটার এবং জেনারেটর (ডিজি) (৩০ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ৪ দশমিক ৪ লিটার। এই হিসাবে ৭৮টি জেনারেটরে প্রতিদিন ৬ হাজার ৫৫২ লিটার ডিজেল ব্যবহৃত হয়। যার মূল্য ৭ লাখ ১৪ হাজার ১৬৮ টাকা। ৭ দিনে দরকার হবে ৪৫ হাজার ৮৬৪ লিটার, যার মূল্য ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৬ টাকা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার নির্দেশনায় বিটিআরসির ফান্ড থেকে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।