■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চার সদস্যের চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছেন। বুধবার রাতে ১০টা ১০ মিনিটে চীনা চিকিৎসকদের দ্বিতীয় দল হাসপাতালে পৌঁছান।
চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলটি হাসপাতালে পৌঁছালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন- চি জিয়াংফাং, ইয়ান সিন, ঝং ইউহি এবং ম্যাং হং ও।
এর আগে এদিন সকালে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিলি। তার সঙ্গে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বৈঠক করে চিকিৎসার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন।
এর চার দিন আগে চীনের পাঁচ সদস্যের চিকিৎসকদের আরও একটি দল এভারকেয়ারে আসেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা দিতে। এবার এলেন চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘ম্যাডামের জন্য যে মেডিকেল বোর্ড রয়েছে তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিক থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভাচুর্য়ালি যুক্ত থাকছেন।“
তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক জন হ্যামিল্টন, অধ্যাপক হামিদ রব, যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক জন প্যাট্রিক, অধ্যাপক জেনিফার ক্রস ও ডা. জুবাইদা রহমান।
ডা. জাহিদ বলেন, লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের ১২ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এ কিউ এম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক জিয়াউল হক, অধ্যাপক মাসুম কামাল, অধ্যাপক এজেড এম সালেহ, অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম ও ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. আল মামুন রয়েছেন।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পরই তিনি হাসপাতালে পৌঁছান।
এসময় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি বেগম জিয়ার পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল (২ ডিসেম্বর) রাত আটটার পর খালেদা জিয়াকে দেখতে তিন বাহিনীর প্রধানরা এভারকেয়ারে গিয়েছিলেন। তারা মেডিকেল বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং রাত ৯টা ২০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বিদায় নেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।
গত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
লন্ডন থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
এছাড়া হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশেই রয়েছেন ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।
