সাবেক আইজিপি বেনজিরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

আদালতের আদেশটি নিশ্চিত করে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, “দুদকের আবেদনে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন -এর আদালত গোপালগঞ্জে তার ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।

গত ৩১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর -এর নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন।

ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।

অথচ গত ৩৪ বছর ৭ মাসের চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো।

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানকালে তার সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলো দুদক। আদালত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ মঞ্জুর করেন।

গত ২২ এপ্রিল (সোমবার) সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান। এরপর ২৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার ) বেনজীর আহমেদের সম্পদের অনুসন্ধানের অগ্রগতির প্রতিবেদন আগামী দুই মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন। এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী, বড় মেয়ে ও ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে এক ভিডিও বার্তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেনজীর আহমেদ বলেন, মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

বেনজীর আহমেদের দাবি, কিছু তথ্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।

২০২১ সালে র‍্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যার অন্যতম বাহিনীটির সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

তখন মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর – যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *