■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার। এদের মধ্যে ডেভিড বেকার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, ‘কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন’ (computational protein design)-এর জন্য ডেভিড বেকারকে (David Baker), ‘প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন’(protein structure prediction)-এর জন্য ডেমিস হাসাবিস (Briton Demis Hassabis) এবং জন জাম্পারকে (John Jumper) যৌথভাবে এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ প্রোটিনকে প্রাধান্য দিয়ে এ বছর রসায়নে নোবেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নোবেল পাওয়া ডেভিড বেকার একেবারে নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরি করেছেন। যা অনেকটা অসম্ভব বিষয় ছিল। অপরদিকে ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছেন যা দিয়ে ৫০ বছরের পুরোনো ‘প্রোটিনের জটিল কাঠামো অনুমান করার’ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এবারের নোবেল বিজয়ীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও গণনার মাধ্যমে প্রোটিনের পুরো বিষয়টি উন্মোচন করেছেন। যা সব রসায়নবিদের স্বপ্ন ছিল। আর এই স্বপ্ন এখন সত্যি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে।
নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীরা পাবেন একটি নোবেল মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। এর বর্তমান বাজারমূল্য ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় হবে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৩ জনের মধ্যে এই ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা ভাগ হয়ে যাবে।
গত বছর কোয়ান্টাম ডট সংশ্লেষণবিষয়ক গবেষণার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৩ বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের মুঙ্গি বাওয়েন্ডি, লুইস ব্রুস এবং রাশিয়ার অ্যালেক্সি একিমোভ।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পদার্থবিদ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন বিজ্ঞানী জন জে হোপফিল্ড এবং কানাডার বিজ্ঞানী জিওফ্রে ই হিন্টন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মেশিন লার্নিং বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাদের এ অর্জন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) চিকিৎসাশাস্ত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য ২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন। মাইক্রোআরএনএর কার্যক্রম আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পান তারা।
পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া আবিষ্কারেও এ দুজন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সোমবার এ দুই নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
প্রতি অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হল। নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আজ ৮ অক্টোবর পদার্থবিদ্যা, ৯ অক্টোবর রসায়ন, ১০ অক্টোবর সাহিত্য, ১১ অক্টোবর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এছাড়া ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা।
করোনাভাইরাসের টিকার প্রযুক্তি আবিষ্কার করে যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন ক্যাটালিন ক্যারিকো ও ড্রু ওয়েইসম্যান। কোভিড-১৯’র বিরুদ্ধে কার্যকর এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পান তারা।
প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা ও অর্থনীতি- এই ছয় বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন; তাদের পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার প্রদানের পর তা উদযাপনে উৎসবের আয়োজন করে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির সদর দফতর নরওয়েতে।
উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথম দিন ঘোষণা করা হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল।
ছয়টি বিভাগে ছয় দিন নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়।
১৯৬৮ সাল থেকে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোবেলের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে অবদানের কথা স্মরণ করে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করে।
১৯০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১১৪টি নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। ২২৭ জন বিজয়ীর মধ্যে ১৩ জন ছিলেন নারী।
শুরুতে নোবেল বিজয়ীদের প্রায় দেড় লাখ ক্রোনা দেওয়া হতো। বাড়তে বাড়তে ১৯৮১ সালে তা ১০ লাখ ক্রোনা হয়। এরপর পুরস্কারের আর্থিক মূল্য দ্রুত বাড়ানো হয়। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এর পরিমাণ ১ কোটি ক্রোনা হয়।
সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ানো হয় নোবেল পুরস্কারের আর্থিক সম্মানী। এ বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা মোট ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (৯ লাখ ৮৬ হাজার ডলার) পাবেন, যা আগের চেয়ে ১০ লাখ ক্রোনা বেশি। নোবেল ফাউন্ডেশনের তহবিলের উন্নতি হওয়ায় এ বছর পুরস্কারের আর্থিক সম্মানী বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের তহবিলে টান পড়ায় ২০১২ সালে পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি ক্রোনা থেকে কমিয়ে ৯০ লাখ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে ৯০ লাখ এবং ২০২০ সালে ফের এক কোটিতে উন্নীত করা হয়।
গত এক দশকে ইউরোর বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ দর হারিয়েছে সুইডিশ ক্রোনা। ফলে পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ ক্রোনা বাড়ানো হলেও সুইডেনের বাইরে তা ততটা বাড়বে না।
২০১৩ সালে আর্থিক সম্মানী কমিয়ে ৮০ লাখ ক্রোনা করা হয়। তখনো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রায় এই পুরস্কারের পরিমাণ দাঁড়াত ১২ লাখ ডলার। সেটা বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা হলেও বিনিময় হারের খেলায় ২০২৪ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ডলারের কম। মুদ্রাস্ফিতি বিবেচনায় নিলে নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্যমান খুব একটা বাড়েনি।
বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার মূল্যমান দাঁড়ায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি।