জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বিভিন্ন প্রতিনিধির ওয়াকআউট

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বক্তব্য শুরুর সঙ্গেই প্রতিবাদ জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন কয়েক ডজন দেশের প্রতিনিধি। হাতে গোনা কয়েকজনই তার ভাষণে হাততালি দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অধিভুক্ত না করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর নেতানিয়াহুর এই ভাষণ বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গাজায় যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের কারণে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই তিনি ফিলিস্তিন ও ইরানসহ শত্রুপক্ষকে একসাথে দায়ী করেন।

ভাষণের সময় প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে হামাস, ইরান, হিজবুল্লাহ ও হুতি বিদ্রোহীদের ‘আমেরিকা নিপাত যাক’ স্লোগানের জন্য দায়ী করেন তিনি। এ সময় প্রতিনিধিদের মধ্যে হৈচৈ শুরু হলে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে একই হুমকির মুখে রয়েছে বলে দাবি করেন।

নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, একসময় যেসব দেশ ইসরায়েলের পাশে ছিল তারাও এখন সমালোচনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা তিনি ‘নিছক পাগলামি’ বলে আখ্যা দেন।

এদিকে ইইউ ইসরায়েলের ওপর শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনা করছে, জার্মানি বন্ধ করেছে অস্ত্র রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রেও ইসরায়েলবিরোধী জনমত বাড়ছে।

ভাষণ চলাকালে কক্ষ খালি হয়ে গেলেও বের হওয়ার সময় ব্যালকনি থেকে কিছু পর্যবেক্ষক তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। ইসরায়েল তার ভাষণ গাজায় সম্প্রচার করেছে। সেখানে তিনি আবারও ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন কখনও রাষ্ট্র হবে না।

প্রথমে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের অবশিষ্ট নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অস্ত্র নামিয়ে রাখুন। জিম্মিদের মুক্তি দিন। এটি করলে আপনারা বাঁচতে পারবেন। আর না করলে ইসরায়েল আপনাদের খুঁজে বের করবে।”

এরপর তিনি কয়েকটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘পপ কুইজের’ মতো সেগুলো পড়ে শুনিয়ে বলেন, “আমেরিকা নিপাত যাক বলে চেঁচায় কারা?” প্ল্যাকার্ডে লেখা জবাব পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, ১. ইরান, ২. হামাস, ৩. হিজবুল্লাহ, ৪. হুতি ৫. সবগুলোই

এ সময় অধিবেশনকক্ষ জুড়ে হৈ হল্লা শোনা যায়। নেতানিয়াহু তখন ৫ নং পয়েন্ট ‘সবগুলো’-তে টিক দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, “তিনি (ট্রাম্প) অন্য যে কোনও নেতার চেয়ে ভাল করে জানেন যে, আমেরিকা এবং ইসরায়েল একই হুমকির মুখে রয়েছে।”

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছান নেতানিয়াহু। সেখানে ম্যানহাটান এলাকায় যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছেন, তার বাইরেও বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলি প্রবাসীরা। এ সময় তাঁদের ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’, ‘তাঁদের (জিম্মি) সবাইকে মুক্ত করুন’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। ড্রামের শব্দের তালে তালে অনেকেই বলছিলেন, ‘সামরিকভাবে এর (সংঘাত) সমাধান হবে না।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের যোদ্ধাদের হামলার পর অনেক নেতাই ইসরায়েলকে সমর্থন করেছিলেন জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, কিন্তু এর পর থেকে সেই সমর্থন উবে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের শত্রু সবসময়ই ছিল। কিন্তু এখন মিত্ররাও ইসরায়েলের সমালোচনা করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকেই এখন ইসরায়েলকে একঘরে রাষ্ট্র হিসাবে দেখছে।

এ সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১০টি দেশ ইসরায়েলের আপত্তির মুখেও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে দশকের পর দশক ধরে জিইয়ে থাকা সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তি দিয়েছে দেশগুলো।

এমনকি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও নেতানিয়াহুর ভাষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দানা বাঁধার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর ভাষণে ফিলিস্তিনি এবং আরব প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাধা আসতে পারে বলে জানিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার ভাষণে হাততালি পাওয়ার জন্য ইহুদি নেতাদের পাশাপাশি তার সমর্থকদেরও আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তার ভাষণ শুরু হতেই জাতিসংঘের কয়েক ডজন দেশের প্রতিনিধি দুয়ো দিয়ে অধিবেশনকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। হাততালি দেওয়ার জন্য রয়ে যান মুষ্টিমেয় কয়েকজন।

তবে নেতানিয়াহু বক্তৃতার মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার সময় দেখা যায় বিপরীত দৃশ্য। অধিবেশন হলের নিচের খালি আসনগুলোর ওপরতলার ব্যালকোনি থেকে পর্যবেক্ষকরা তাকে দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা দেন।

নেতানিয়াহুর ভাষণ লাউডস্পিকারে করে গাজায় সম্প্রচার করেছে ইসরায়েল। ভাষণে নেতানিয়াহু বিভিন্ন দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়াকে ‘নিছক পাগলামি’ বলে অভিহিত করেছেন।

কয়েকটি দেশের দেওয়া এই স্বীকৃতিকে ‘মর্যাদাহানিকর’ বলেছেন তিনি। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হতে না দেওয়ার অঙ্গীকারও ফের ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাবে, ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় গাজায় ইতোমধ্যেই ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত। বিপুল সংখ্যক মানুষ অনাহারের মুখে পড়ছে।

বর্তমানে দেড় শতাধিক দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও তা করেনি। তারা ইসরায়েলকে প্রবলভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি পশ্চিম তীর দখল বা সংযুক্তির অনুমতি দেবেন না।

নেতানিয়াহুর ভাষণের আগের দিনই ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস সাধারণ পরিষদে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা না দেওয়ায় তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে সরাসরি উপস্থিত হতে পারেননি।

মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণাগুলো তিনি স্বাগত জানালেও এর বাইরে আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখনই সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার করা।  

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *