ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোম্পানির শেয়ারের অব্যাহত দরপতন

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের মালিক কোম্পানির শেয়ারের দাম শুক্রবার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ৫ এপ্রিল ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের শেয়ারের দাম আরও ১২ শতাংশ কমে।

বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের কোম্পানির শেয়ার বিপুল হারে বিক্রি করে দেওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই কোম্পানিতে ট্রাম্পের নিজের শেয়ারমূল্য আরও প্রায় ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার কমে গেছে।

গত ২৬ মার্চ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর ট্রাম্পের এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানির শেয়ারের দাম ৭৯ দশমিক ৩৮ ডলারে উঠে গিয়েছিল। প্রতীকী নাম ‘ডিজেটি’ টিকারে নাসডাক এক্সচেঞ্জে এই কোম্পানির লেনদেন হচ্ছে।

ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হিস্যা (শেয়ার) প্রায় ৫৯ শতাংশ। এখন শেয়ারের দরপতনের কারণে কোম্পানিতে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত হিস্যা ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৩২০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে ট্রাম্পের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৪৯০ কোটি ডলার। ২৬ মার্চ অভিষেকের দিন ট্রাম্পের শেয়ারমূল্য ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারে উঠে গিয়েছিল।

ট্রাম্পের মালিকানাধীন এই কোম্পানি ২০২৩ সালে তাদের রাজস্ব আয় করে মাত্র ৪১ লাখ ডলার। একই সময়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই পরিস্থিতি দেখে আর্থিক খাত বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওয়াল স্ট্রিটে ট্রাম্পের কোম্পানির শেয়ার অতি মূল্যায়িত হয়েছে।

গত সপ্তাহের সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানির শেয়ারের দাম ২১ শতাংশ কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির পক্ষে আর্থিক দায় মেটানো কঠিন হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকটাই এগিয়ে। এক্সে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বাতিল হওয়ার পর তিনি নিজেই এই কোম্পানি খুলে বসেন। কিন্তু এক্সের ধারেকাছে যেতে পারেনি ট্রাম্পের কোম্পানি।

কোম্পানিতে ট্রাম্পের মোট শেয়ারের পরিমাণ ৭ কোটি ৮৭ লাখ। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আগামী ছয় মাস নিজের শেয়ার বিক্রি বা তার বিপরীতে ঋণ করতে পারবেন না। তিনি এই বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে শেয়ারের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন মিডিয়া কোম্পানি ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (টিএমটিজি) শেয়ারবাজারে লেনদেনের প্রথম দিনেই (২৬ মার্চ) দাম বাড়ে ৫৯ শতাংশ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের কল্যাণে প্রথম দিনেই শেয়ারের দাম এতটা বেড়েছে। বিভিন্ন মামলায় জরিমানা হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প আইনগত সমস্যায় আছেন, এই পরিস্থিতিতে শেয়ারের দাম বাড়ায় ট্রাম্প বড় অঙ্কের মুনাফা করতে পারবেন। তাঁর পক্ষে মামলার খরচ নিয়ে আর বিশেষ চিন্তা করতে হবে না।

২৭ মার্চ ট্রাম্পের কোম্পানির শেয়ারের দাম ৭৯ দশমিক ৩৮ ডলার পর্যন্ত ওঠে। এর ফলে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়। অথচ ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে ট্রাম্পের কোম্পানির পরিচালন ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ডলার। এ সময় তাঁর রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ৩৪ লাখ ডলার। এর ফলে শেয়ারবাজারে অভিষেকের প্রথম দিনেই এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া এবং বাজার মূলধন ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় এবং গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের দায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার (বর্তমান এক্স) ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ভর করে ট্রাম্পের উত্থান, সেই মাধ্যম থেকে দূরে থাকতে পারেননি তিনি। সে জন্য তিনি নিজেই একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে বসেন, যার নাম দেন ট্রুথ সোশ্যাল।

২০২১ সালে বাজারে আসার পর থেকে ট্রুথ সোশ্যাল তেমন একটা সুবিধা করতে পারছিল না। এ সময়ে তাদের বিক্রয়লব্ধ আয় ছিল ৫০ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশন করপোরেশনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার অনুমোদন পায় ট্রুথ সোশ্যাল। এর পর থেকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের শেয়ারের দাম বাড়ছে।

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর এই দুই কোম্পানির সম্মিলিত শেয়ারমূল্য ৬০০ শতাংশ বা ছয় গুণ বেড়েছে। এর ফলে মিমে স্টক হিসেবে ট্রুথ সোশ্যালের যে জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছিল, তা আরও পাকাপোক্ত হয়েছে; অর্থাৎ যে স্টকের দাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

২০২১ সালে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ট্রাম্পের টিএমটিজির সঙ্গে একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে চুক্তি করার পর দেশটির সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারা কোম্পানির প্রধান নির্বাহীকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। এ ছাড়া ভুল তথ্য প্রকাশের দায়ে তাদের ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার জরিমানাও হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *