■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অধিবেশনে যোগ দিতে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। তার সফরসঙ্গীর তালিকায় বিএনপির দুইজন, জামায়াতের একজন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একজন নেতা রয়েছেন
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তৌহিদ হোসেন জানান, আমাদের প্রতিনিধিদলে আছেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, জামায়াতের আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
তবে রাজনীতিবিদের বাহিরে প্রধান উপদেষ্টার বহরে মোট কতজন সফরসঙ্গী হবেন সেটি জানা যায়নি।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর তালিকায় রাজনীতিবিদ রাখার কারণ জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা করা হয়েছে, কারণ আমরা একটা পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি, যেখানে রাজনীতিবিদদের কাছে দেশের সার্বিক পরিচালনার ভার যাচ্ছে। সেই হিসেবে আমরা তাদের প্রতিনিধিদলে রেখেছি।
তিনি জানান, এবারই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ মহাসচিবের সভাপতিত্বে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন জানান, প্রধান উপদেষ্টা আগামী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপদেষ্টা জানান, সরকারের বর্তমানে অন্যতম অগ্রাধিকার হল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং সুষ্ঠুভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি সুযোগ বিশ্ব দরবারে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত আমাদের চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং গণতন্ত্র অভিমুখে আমাদের যাত্রাকে উপস্থাপন করা।
তিনি বলেন, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর, এবং সর্বোপরি ফিলিস্তিন ও ইসরাইল-এর যুদ্ধ বিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস তার বক্তব্যে উঠে আসবে।
এবারের অধিবেশন কেন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এবার ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ কর্তৃক সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এই উচ্চ-পর্যায়ের সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা উঠে আসে তার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গত মাসে আমরা কক্সবাজারের প্রথমবারের মত একটি অংশীদারদের সংলাপের আয়োজন করি। প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন সংকটের উত্থানের পরেও সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গা সংকটে যে বিশ্বব্যাপী আলোচ্যসূচীতে পিছিয়ে পড়েনি— প্রথমবারের মত এ বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চ-পর্যায়ের সভার আয়োজন এবং স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিব-এর সফর তারই প্রমাণ। আমরা এ উচ্চ-পর্যায়ের সভার সফল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উপদেষ্টা জানান, এ বছর একইসঙ্গে বিশ্ব যুব কর্মসূচীর ৩০ বছর পূর্তি এবং নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক ঐতিহাসিক রেজ্যুলুশনের ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। এবারের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন।
নিউইয়র্ক সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবের স্বাগত অভ্যর্থনা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির জনাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনাসহ বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এ সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে। আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে।