গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ ইসরায়েলের

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক 

সেনাবাহিনীকে গাজা দখলের অভিযান থামানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাবে হামাস আংশিকভাবে রাজি হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত আসে।

সাংবাদিক ডরোন কাদোস জানান, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে সামরিক কার্যক্রম ‘সর্বনিম্ন’ পর্যায়ে নামিয়ে কেবল প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে বলেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, এর বাস্তবিক অর্থ হলো: গাজা সিটি দখলের অভিযান আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, গাজায় অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী প্রস্তুত।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যায় যুদ্ধের অবসানের জন্য গত সপ্তাহে ২০টি পয়েন্ট সম্বলিত নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করেন ট্রাম্প। ইসরায়েল আগেই এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিল, গতকাল শুক্রবার তাতে সম্মতি জানিয়েছে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসও।

শনিবার (৪ অক্টোবর) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, হামাস সব জিম্মিকে ছেড়ে দিতে রাজি হওয়ার পর ইসরায়েলও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার প্রথম ধাপের তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে তার ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। সময়সীমার কয়েক ঘণ্টা আগে হামাস এক বিবৃতিতে আংশিক সম্মতি জানায়। তারা জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হলেও কিছু শর্ত নিয়ে আরও আলোচনার দাবি করেছে।

ট্রাম্প হামাসের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সংগঠনটি স্থায়ী শান্তির পথে এগোচ্ছে।

এর আগে হোয়াইট হাউস প্রকাশিত পরিকল্পনায় গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মি ফেরত দেওয়া এবং মৃতদের দেহাবশেষ হস্তান্তরের কথা বলা হয়। এর বিনিময়ে ইসরায়েলও গাজার শত শত বন্দিকে মুক্তি দেবে।

ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি ও গাজা যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী হামাস

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে হামাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আলোকে জীবিত ও মৃত সকল ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে গোষ্ঠীটি। একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও প্রশাসনিক হস্তান্তর নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহও জানিয়েছে তারা।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত তারা। এতে বলা হয়, আমরা বিস্তৃত পরামর্শ শেষে একটি দায়িত্বশীল অবস্থানে পৌঁছেছি। ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবের আলোকে একটি বাস্তবসম্মত সমাধানের পথে এগোতে চাই।

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি যুদ্ধের রেখা থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেয়, তাহলেই তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত। মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের মধ্যে দুইজন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় দিয়েছেন তার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার জন্য। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি তারা সম্মত না হয়, তাহলে সব নরক গাজায় নেমে আসবে।

এই প্রস্তাবে রয়েছে- সকল জিম্মির মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর ধাপে ধাপে প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তা, স্বাধীন ফিলিস্তিনি প্রশাসনের গঠন।

গাজা নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস জানিয়েছে, তারা প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি স্বাধীন ও জাতীয় ঐকমত্যভিত্তিক ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তরে প্রস্তুত, যদি এটি আরব ও ইসলামি দেশগুলোর সমর্থন পায়।

জিম্মিদের পরিবারগুলো এই ঘোষণায় আশার আলো দেখছে। এক জিম্মির বাবা রোনেন নিউট্রা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এটি শেষের শুরু। হামাস বুঝতে পেরেছে যে সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখন আন্তর্জাতিক মহলের সম্মিলিত চাপে একটি সমাধান সম্ভব।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবকে উপযুক্ত ভিত্তি হিসেবে স্বাগত জানালেও সতর্ক করে দিয়েছেন, হামাস পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল কাজ শেষ করবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ও একটি টেকসই শান্তির সূচনা হতে পারে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *