যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি

:: যশোর প্রতিনিধি ::

যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৩টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর। 

সপ্তাহখানেক ধরে খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এ বিভাগের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা এক ডিগ্রি করে বাড়ছে। গত ১৮ এপ্রিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিন তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার যশোরে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার  যশোরে তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাঁড়াল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর চুয়াডাঙ্গায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক করে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন চুয়াড়াঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার বাসিন্দা আর একজন পাবনা শহরের। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় সাত ঘণ্টার ব্যবধানে হিটস্ট্রোকে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক ও একজন বৃদ্ধ মহিলা। সকাল ৮টার দিকে কৃষিকাজ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোক করেন জাকির হোসেন (৩৪) নামে ওই ব্যক্তি। অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। জাকির উপজেলার দর্শনা থানার সীমন্ত সংলগ্ন ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে ও ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি। নিহতের পিতা আমির হোসেন জানান, ধানের জমিতে সেচ (পানি) দেয়ার জন্য জাকির সকাল ৮টার দিকে মাঠে যায়। মাঠে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর খবর পাই ছেলে মাঠে স্ট্রোক করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে সে মারা যায়। ওই কৃষকের মৃত্যুর সাত ঘণ্টা পর উপজেলায় হিটস্ট্রোকে আরও এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মর্জিনা খাতুন (৬০) নামে ওই মহিলা মারা যান। তিনি সদর ইউ‌নিয়ন প‌রিষদপাড়ার আ‌জিম উদ্দী‌নের স্ত্রী। নিহতের ছেলে কামরুল ইসলাম কামু জানান, বেলা ৩টার দি‌কে অ‌তি‌রিক্ত তাপে আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হ‌য়ে প‌ড়েন। এরপর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার উদ্দেশ্যে অটোরিকশায় উঠানোর পর মারা যান তিনি। অন্যদিকে পাবনায়ও হিটস্ট্রোকে সুকুমার দাস (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। দুপুরে শহরের রূপকথা রোডে একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় হিটস্ট্রোক করেন তিনি। এসময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে যশোরের সাধারণ মানুষের জনজীবন। শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাস লাগছে চোখে-মুখে। যাত্রাপথে ছাতা মাথায় দিয়ে তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন অনেকেই। স্বস্তি পেতে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তার পাশে জিরিয়ে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ হাতে মুখে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা হওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, প্রচণ্ড গরমে গলে গেছে শহরের বেশ কয়েকটি পিচঢালা সড়ক। 

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিচিত্রা মল্লিক বলেন, তীব্র দাবদাহে হার্ট অ্যাটার্কে ও স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার বেশির ভাগই এ সব রোগে আক্রান্ত। মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। গত ১৭ এপ্রিল হতে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি বিভাগে এ ধরনের আটজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে আনার সময় পথের মাঝে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন শওকত আলী। তিনি বলেন, তীব্র গরমের কারণে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এত গরম যে মাথা ঘুরাচ্ছে। কিন্তু ভাড়া না মারলে তো সংসার চলবে না।

যশোর শহরের রিকশাচালক মফিজুর রহমান বলেন, মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে। যারা বাইরে আসছে গরমের সঙ্গে তাদেরও মেজাজ গরম থাকছে। মানুষের সঙ্গে ভালো করে কথা বলা যাচ্ছে না। 

গরমে পরিবহনে চলাচল করা যাত্রীরাও নিদারুণ কষ্টে যাতায়াত করছেন। শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাসার ছাদের পানির রিজার্ভ ট্যাংকের পানি অনেক গরম হয়ে যাচ্ছে। দুপুর বারোটা থেকে বিকেল পর্যন্ত পানিতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।

শহরে শরবত বিক্রেতা কালাম হোসেন জানান, গরম বাড়ায় তাদের শরবত বিক্রি বেড়েছে। মানুষ পিপাসা মেটাতে ও একটু স্বস্তি নিতে ঠাণ্ডা লেবুর শরবত পান করছেন। 

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এ দাবদাহ আরও কিছুদিন বিরাজ করবে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অস্বস্তি বাড়বে।

রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

অধিদপ্তর আরও জানায়, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা। এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এছাড়া, মোংলায় ৪১ দশমিক সাত; ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ছয়; খুলনায় ৪১ দশমিক দুই; আরিচা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ৪০ দশমিক আট; সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক তিন ও টাঙ্গাইলে ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক নয় ডিগ্রি পর্যন্ত মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক নয় পর্যন্ত মাঝারী, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক নয় ডিগ্রি পর্যন্ত তীব্র ও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিবেচনা করা হয়।

ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুএক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *