■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টায় দেশটির রাজধানী অটোয়ায় নিজ বাসভবনের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, তাঁর দল লিবারেল পার্টি একজন উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার আগে পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন তিনি।
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ট্রুডো বলেন, আমি মনে করি কানাডার জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে প্রকৃত পছন্দের নেতা খুঁজে বের করার দাবিদার।
তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, যদি আমাকে ‘অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ’ লড়তে হয় তাহলে কানাডিয়ানদের জন্য ব্যালটে সেরা বিকল্প হতে পারবেন না। আমি অনেক ভেবেছি এবং আমার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।
জনগণের উদ্দেশ্যে ট্রুডো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি আমার দেশ এবং আপনাদের জন্য লড়েছি। আমি দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। আমি সবসময় আমার দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, তবে এখন দেশ এবং সময় পাল্টেছে। আমি মনে করি ‘নতুন সূচনা করার সময়’ এসেছে। তিনি বলেন, আশা করি আমার পদত্যাগ দেশের রাজনীতিতে তৈরি হওয়া উত্তাপ কমিয়ে আনবে। এমন একটি সরকার আসবে যারা কানাডার জনগণের সমস্যাগুলোর দিকে খেয়াল রাখবে।
তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলা ট্রুডো বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ‘জটিল’ সময়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য পার্লামেন্টে একটি নতুন শুরু দরকার।
আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক চাপের মুখে ছিলেন ট্রুডো। দেশের রাজনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বর্তমান সময়ে তার জনপ্রিয়তা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। বিরোধীরা তো বটেই, তার নিজ দলের মধ্য থেকেও তার পদত্যাগের দাবি উঠছিল।
ট্রুডো ২০১৩ সালে কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন কানাডার লিবারেল দল ছিল গভীর সংকটে এবং প্রথমবারের মতো হাউস অব কমন্সে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল। তার নেতৃত্বে দলটি পুনরুজ্জীবিত হলেও, বর্তমান সময়ে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
তবে ট্রুডোর পদত্যাগের পর লিবারেল পার্টি রাজনৈতিক মঞ্চে স্থায়ী নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় চলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত যখন নির্বাচনের আগে জরিপগুলোও বলছে, আগামী অক্টোবরের নির্বাচনে লিবারেলরা রক্ষণশীলদের কাছে ব্যাপকভাবে পরাজিত হতে পারে। এর ফলে নতুন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো অর্থমন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যাতে তিনি অন্তর্বর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিনা। এক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এভাবে, ট্রুডোর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কানাডার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে। যা লিবারেল পার্টির ভবিষ্যতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
ট্রুডো ২০১৫ সালে লিবারেল পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর প্রায় এক দশক ধরে দেশটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে ট্রুডোর নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে লিবারেল পার্টি। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে কানাডায় নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে দলীয় নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন ট্রুডো।
পদত্যাগের জন্য বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের মধ্য থেকেও ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়ছিল। এখন ট্রুডোর উত্তরসূরি কে হতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই তালিকায় ট্রুডোর সরকারের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মার্ক কারনির নাম আলোচনায় রয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গেল ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে পদত্যাগের জন্য ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়তে থাকে।