হাটহাজারীতে কওমী-সুন্নি সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি

■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■

চট্টগ্রামের হাটহাজারী সদরে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্নিপন্থী এলাকাবাসীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। শনিবার রাত ৮টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জশনে জুলুসে যাওয়া গাড়িবহরের এক যুবক হাটহাজারী বড় মসজিদ লক্ষ্য করে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও কওমি লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। পরে ফটিকছড়ি থানা-পুলিশ ওই যুবককে আটক করে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবক আরিয়ান ইব্রাহিমকে (২০) আটক করেছে পুলিশ। তার বাড়ি ফটিকছড়ি পৌসভার ৩নং ওয়ার্ড এলাকায়।

অভিযোগের বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর আহমদ বলেন, উস্কানিমূলক ফেসবুক আইডিটি ইতোমধ্যে ডিঅ্যাকটিভ করা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটকের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে।  তাকে বিকেলে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঘটনার পরপরই থানা পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত আটক রয়েছেন। অপরাধীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। 

অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। দুই পক্ষ মুখোমুখি থাকায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

এতে বলা হয়, ‘আমি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন মীরের হাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেইট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, হাটহাজারী পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অদ্য ০৬.০৯.২০২৫খ্রি, রাত ১০:০০টা হতে আগামীকাল ০৭.০৯.২০২৫খ্রি, বিকাল ০৩.০০ পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম।’

আদেশে আরও বলা হয়, ‘উক্ত সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশী অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম।’

এর আগে, চট্টগ্রাম থেকে জশনে জুলুসের গাড়ি যাওয়ার পথে হাটহাজারী কওমী মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে ভাঙচুর চালায়। এতে জুলুস থেকে ফেরা লোকজন পাশের এলাকায় চলে যায়। পরে তাদের উপর সেখানেও হামলা করে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এতে এলাকাবাসী যুক্ত হয়ে কওমী শিক্ষার্থীদের উপর পাল্টা হামলা চালায়। উভয়পক্ষের দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। হাটহাজারী বাস স্টেশনে কওমী ছাত্ররা আরও ৫টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। হাটহাজারী বাস স্টেশন থেকে মাদ্রাসা পর্যন্ত কওমী ছাত্ররা মিছিল দিচ্ছেন। 

হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ বার বার শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় ফিরে আসতে বললেও উত্তেজিত ছাত্ররা তা মানছেন না।  হাটহাজারী সার্কেলের পুলিশ সুপার কাজী তারেক আজিজ বলেন, পুলিশ উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায়। এতে বেশ কয়েকজন আহতের কথা শুনেছি। 

সন্ধ্যার পর দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে ঢিল–ছোড়াছুড়ি অভিযোগ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও কওমি লোকজন হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আহমেদ দিদার কাসেমী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে মাদ্রাসায় ঢুকে যেতে বলেন।

এরপর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও কওমি লোকজন মাদ্রাসার সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে সুন্নি জনতা অবস্থান নেয় হাটহাজারীর কাচারি সড়কে। উভয় পক্ষ টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে বন্ধ হয়ে যায় হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়ক।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *