ইরানের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির অনুমোদনের ভিত্তিতে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২০ মে) ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ গার্ডিয়ান কাউন্সিল এ ঘোষণা দিয়েছে।

ইরানি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের অভিভাবক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ জানিয়েছেন, খুব শিগগির ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার, বিচার বিভাগের প্রধান এবং পরিষদের অন্যান্য সদস্য মিলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। 

হাদি তাহান নাজিফ জানিয়েছেন, ইরানের সংবিধান অনুসারে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনির অনুমোদনের পর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। তিনি আরও জানান, ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার, বিচার বিভাগের প্রধান ও অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে যাঁরা পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। 

মোহাম্মদ মোখবার বয়সে সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির চেয়ে বড়। তিনি ১৯৫৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর খুজেস্তান প্রদেশের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইব্রাহিম রাইসির মতো মুখবারও আয়াতুল্লাহর বেশ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ইব্রাহিম রাইসি ২০২১ সালে নির্বাচনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মোহাম্মদ মুখবার তাঁর মন্ত্রিসভার প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। 

মোহাম্মদ মোখবার তাঁর প্রথম জীবনের শিক্ষা লাভ করেন নিজের শহর দেজফুলে এবং আভাজে। পরে তিনি আইন ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। মুখবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সদস্য ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি আইআরজিসির মেডিকেল কর্পসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 

এ ছাড়া ১৯৯০-এর দশকে খুজেস্তান প্রদেশের দেজফুল টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মদ মোখবার। এ ছাড়া তিনি প্রাদেশিক সরকারে বেশ কয়েকটি দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত দশকের শুরুর দিকে মুখবারকে ইরানের মোস্তফাজান ফাউন্ডেশনের বাণিজ্যবিষয়ক মাখার প্রধান নিযুক্ত হন। এ ছাড়া তিনি দেশটির সিনা ব্যাংকের হেড অব বোর্ডের দায়িত্বও পালন করেছেন। 

মোহাম্মদ মোখবার ২০০৭ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহের সেন্টার ফর এক্সিকিউশন অব ইমাম খোমনিস অর্ডার বিভাগের প্রধান ছিলেন।

২০২১ সালের আগস্টে ইরানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। এর পরপর খামেনির অনুমতি নিয়ে মোহাম্মদ মোখবারকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে মোহাম্মদ মোখবার ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের গভর্নর এবং ইরানের সিতাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা ইরানের অন্যতম শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক কনগ্লোমারেট (একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অধীন থাকা বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী)।

রোববার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তারা। ফেরার পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। তবে তাদের বহরে থাকা অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

সোমবার ইরানের কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তার দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তিনি শহীদ হয়েছেন। তার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানও নিহত হয়েছেন।

ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং তার সফরসঙ্গীদের মৃত্যুতে ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার (২০ মে) সকালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি এ শোক ঘোষণা করেন।

এ সময় ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন খামেনি।

খামেনি বলেন, ‘রাইসি একজন কঠোর পরিশ্রমী আলেম এবং একজন জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ইরান, দেশ এবং ইসলামের জনগণের সেবায় তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘ইরানি জাতি একজন উষ্ণ হৃদয়, বিনয়ী এবং মূল্যবান সেবককে হারিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাইসি সমালোচনার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ইরানের জনগণের জন্য তার কঠোর পরিশ্রম বন্ধ করেননি।’

তিনি ইরানি জাতির প্রতি সমবেদনা জানান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুমোদন দেন। পাশাপাশি নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে ইরানের পার্লামেন্ট ও বিচার বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকা অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন খামেনি, যার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, তাবরিজ জুমার নামাজের নেতা এবং প্রাদেশিক গভর্নরও রয়েছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *