বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন যেসব রাষ্ট্রপ্রধান

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে বিধ্বস্ত হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে রাইসি ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতিসহ ৯ জন নিহত হয়।

শুধু ইরানের প্রেসিডেন্ট নয়; বিমান দুর্ঘটনায় বিভিন্ন সময় প্রাণ হারিয়েছেন অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। ১৯৩৬ সাল থেকে অন্তত ২০ রাষ্ট্রপ্রধান প্রাণ হারিয়েছেন বিমান দুর্ঘটনায়।

আরভিড লিন্ডম্যান

১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী আরভিড লিন্ডম্যান বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান। উড্ডয়নের পরপরই ঘন কুয়াশার কারণে তাঁর বিমানটি ক্রয়ডন বিমানবন্দরের পাশে বসত বাড়ির ভেতর আছড়ে পড়ে।

মার্শাল হোসে ফেলিক্স এস্টিগারিবিয়া

১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট মার্শাল হোসে ফেলিক্স এস্টিগারিবিয়া।

ল্যাডিস্ল সিকোরস্কি

১৯৪৩ সালের ৪ জুলাই পোল্যান্ডের সৈনিক এবং নির্বাসিত সরকারের রাষ্ট্রনায়ক ল্যাডিস্ল সিকোরস্কির বিমান জিব্রাল্টারে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

নেরিউ রামোস

১৯৫৮ সালের ১৬ জুন ব্রাজিলের তৎকালীন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট নেরিউ রামোসকে বহনকারী ক্রুজেইরো এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে তিনি মারা যান।

বার্থেলেমি বোগান্ডা

পরের বছর ১৯৫৮ সালের ২৯ মার্চ মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীনতার নায়ক বার্থেলেমি বোগান্ডা বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান।

ড্যাগ হ্যামারস্কজোল্ড

১৯৬১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারস্কজোল্ড। সে সময়ে তিনি কঙ্গোতে শান্তির মধ্যস্থতার দায়িত্বে ছিলেন। বিমানটি বর্তমান জাম্বিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় হ্যামারস্কজোল্ডসহ ১৬ জন মারা যান।

আবদুল সালাম আরিফ

১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুল সালাম আরিফ। এর মাত্র তিন বছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন।

রেনে ব্যারিয়েন্টোস

১৯৬৯ সালের ২৭ এপ্রিল কোচাবাম্বা শহরে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট রেনে ব্যারিয়েন্টোস।

জেমাল বিজেডিক

১৯৭৭ সালের ১৮ জানুয়ারি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ক্রেসেভো শহরের কাছে ইনাক পর্বতে বিধ্বস্ত হয় একটি লিয়ারজেট ২৫ মডেলের একটি বিমান। এতে ছিলেন যুগোস্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেমাল বিজেডিক। দুর্ঘটনায় বিজেডিক, তার স্ত্রী এবং আরও ছয়জন মারা যান।

আহমেদ ওল্ড বাউসিফ

১৯৭৯ সালের ২৭ মে আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ডাকার উপকূলে বিধ্বস্ত হয় মৌরিতানিয়ার প্রধানমন্ত্রী আহমেদ ওল্ড বাউসিফকে বহনকারী বিমানটি। দুর্ঘটনায় মারা যান বাউসিফ।

ফ্রান্সিসকো সা কার্নেইরো

১৯৮০ সালের ৪ ডিসেম্বর পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সিসকো সা কার্নেইরো এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যাডেলিনো আমারো দা কস্তার বিমানটি রাজধানী লিসবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে দুজনেই প্রাণ হারান।

জেইমে রোল্ডোস আগুইলেরা

১৯৮১ সালের ২৪ মে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট জেইমে রোল্ডোস আগুইলেরা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মেজর জেনারেল মার্কো সুবিয়া মার্টিনেজ। পেরুর সীমান্তের কাছে তাদের বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

ওমর টোরিজোস

১৯৮১ সালের ৩১ জুলাই একটি জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয় পানামার প্রেসিডেন্ট ওমর টোরিজোসকে বহনকারী ছোট একটি বিমান। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট ওমর।

সামোরা মাচেল

১৯৮৬ সালের ১৯ অক্টোবর বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট সামোরা মাচেল। এ দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ ৩৩ জন প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার তদন্তে পাইলটকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

রশিদ কারামি

১৯৮৭ সালের ১ জুন হেলিকপ্টারে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রশিদ কারামি। বৈরুতে যাওয়ার জন্য তিনি যে হেলিকপ্টারে চড়েছিলেন তাতে রাখা ছিল রিমোট-নিয়ন্ত্রিত একটি বোমা। উড্ডয়নের পরপরই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। এতে শুধু প্রধানমন্ত্রী কারামি মারা যান।

জিয়াউল হক

১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্নল্ড লুইস রাফেলকে বহনকারী একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের সকলেই নিহত হন।

সাইপ্রিয়েন এনতারিয়ামিরা ও জুভেনাল হাবিয়ারিমানা

১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল কিগালি বিমানবন্দরের কাছে বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিয়েন এনতারিয়ামিরা এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানাকে বহনকারী একটি বিমানে গুলি চালানো হয়। প্রেসিডেন্ট ভবনের খুব কাছে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। এতে বিমানে থাকা সকলেই প্রাণ হারান।

বরিস ট্রাজকভস্কি

২০০৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মেসিডোনিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট বরিস ট্রাজকভস্কিকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্ত হয়। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মোস্তার শহরের কাছে বিধ্বস্ত হলে প্রেসিডেন্ট বরিস ও তার উপদেষ্টাসহ আটজন মারা যান। তদন্তে উঠে আসে পাইলটের ত্রুটির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

লেচ কাকজিনস্কি

২০১০ সালের ১০ এপ্রিল রাশিয়ার স্মোলেনস্ক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট লেচ কাকজিনস্কি এবং তার স্ত্রীসহ ৯৬ জনকে বহনকারী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ক্যাটিন গণহত্যার স্মরণে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল পোলিশ প্রেসিডেন্টর। বিমানটি অবতরণের সময় একটি বনে বিধ্বস্ত হলে সকল আরোহী প্রাণ হারান।

সেবাস্তিয়ান পিনেরা

চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা এবং তার সফরসঙ্গীদের বহন করা রবিনসন আর-৬৬ লস রিওস অঞ্চলের লেক রাঙ্কোতে বিধ্বস্ত হয়। ভারী বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে বিমান থেকে হ্রদে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনজন। তবে সিট বেল্ট খুলতে না পারায় প্রাণ হারান সেবাস্তিয়ান।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *