■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে ‘হান্ড্রেড নেক্সট’ (TIME100 Next) তালিকায় ঠাঁই দিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন। প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখার জন্য বিশ্বের ১০০ জন উদীয়মান প্রভাবশালী ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এবার এই তালিকায় নেতৃত্বের ক্যাটাগরিতে আছেন নাহিদ ইসলাম।
প্রকাশিত তালিকাটিতে উপদেষ্টা নাহিদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহায্য করার জন্য নাহিদ ইসলামের বয়স ২৬ বছরের বেশি বয়সী হতে হয়নি। সমাজবিজ্ঞানের এই স্নাতক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের সূচনা করা ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ।’
নাহিদ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়তো এখনো সামনে রয়েছে। নাহিদ ইসলাম হলেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই জেনারেশন-জেড মন্ত্রীদের একজন। ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা মেরামত করাই তাঁদের কাজ।’
নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া সর্বকনিষ্ঠ সদস্যদের একজন। ঢাকা শহরের বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র।
টাইম-হান্ড্রেড নেক্সট তালিকা উদীয়মান বিশ্বনেতাদের নিয়ে তৈরি হয়, যারা ইতিমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন গড়েছে। এই বছরের তালিকাটিতে নেতৃত্বের বৈচিত্র্য রয়েছে। এবারের তালিকায় অর্ধেকেরও বেশি নারী।
ব্যবসা, বিনোদন, ক্রীড়া, রাজনীতি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য এবং আরো অনেক বিষয়ে ভবিষ্যৎ গঠনকারী ১০০ জন উঠতি প্রভাবশালীকে তুলে ধরা হয় এই তালিকায়। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর এটি প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে করা টাইম-১০০ তালিকারই এটি একটি সম্প্রসারণ।
টাইম ম্যাগাজিন নাহিদের সম্পর্কে লিখেছে, আন্দোলনের অনেক নেতার মধ্যে নাহিদ অন্যতম, বাংলাদেশের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে জনমানুষের কাছে তার পরিচিতি আরো বাড়তে থাকে।
সেই নাহিদই ৩ আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনারে লাখো জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। কী ছিল ঐতিহাসিক একদফা, আজ কারো অজানা নয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাহিদ ইসলাম মাইকে সমবেত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এক দফাটি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’
টাইমকে নাহিদ বলেছেন, ‘কেউ ভাবতেও পারেনি তাকে (হাসিনাকে) উৎখাত করা সম্ভব হবে।’ কিন্তু তাই করে দেখায় মুক্তিকামী জনতা, দেশব্যাপী তীব্র বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।
তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোই এখন সামনে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারে জেন জি’র দুই উপদেষ্টার একজন নাহিদ। অন্যজন হচ্ছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। টাইম বলেছে, ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে, এখন তাকে মেরামতের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে নতুন সরকারকে।
এ বিষয়ে নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’